ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

পরীক্ষা বন্ধ রেখে দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন: বদলি প্রক্রিয়া শুরু



পরীক্ষা বন্ধ রেখে দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন: বদলি প্রক্রিয়া শুরু
ছবি: সংগৃহীত

বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অবশেষে তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আগামী রবিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে তাঁরা স্থগিত হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করবেন বলে বৃহস্পতিবার রাতে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন।

তবে এই আন্দোলনের জেরে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং স্কুল তালা দেওয়ার মতো ঘটনার জন্য ইতিমধ্যে একাধিক শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।

এরই সাথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৫ নেতাসহ ৪২ সহকারী শিক্ষককে পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপপ্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার এক আদেশে ৪২ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় বদলি করেছে। ফলে এই শিক্ষকরা তাঁদের বর্তমান কর্মস্থলের জেলায় থাকতে পারবেন না। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৫ জন শিক্ষক নেতাকে চিহ্নিত করে বদলি করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের নেপথ্যে কারা উসকানি দিয়েছেন বা কারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে।

এর আগে বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকদের অবিলম্বে কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এবং ফিরে না এলে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।

নোয়াখালীতে ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শোকজআন্দোলনের কারণে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে শোকজ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে নোয়াখালী জেলা।

নোয়াখালীর ২৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এসব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিয়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে শিক্ষকরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নেননি, বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছেন, যা 'দায়িত্বহীন আচরণ'।

এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

পাল্টা কর্মসূচি ও আন্দোলন স্থগিতমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারির রাতেও 'প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ' ও 'বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ'-এর পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে বদলি ও শোকজের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা আন্দোলন স্থগিতের কথা জানান।

সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাভঙ্গ বা শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রমাণে সর্বনিম্ন শাস্তি তিরস্কার এবং সর্বোচ্চ চাকরি থেকে বরখাস্তের বিধান রয়েছে।

চাকরি আইনের দশম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর আচরণ এবং শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিধান অনুসরণক্রমে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা রুজু ও পরিচালনা করতে পারবে।

এই আইনের শাস্তিতে বলা হয়েছে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কার্যধারায় দোষী সাব্যস্ত কোনো কর্মচারীকে এতদসংক্রান্ত বিধির বিধান সাপেক্ষে, নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক লঘু বা গুরুদণ্ড আরোপ করতে পারবে, যথা—

লঘু দণ্ডসমূহ—তিরস্কার; নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ; বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনমিতকরণ; কোনো আইন বা সরকারি আদেশ অমান্যকরণ অথবা কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সংঘটিত হইলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়।

গুরুদণ্ডসমূহ—নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ; বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; চাকরি হইতে অপসারণ; চাকরি হইতে বরখাস্ত।

 

এনএম/ধ্রুবকন্ঠ

বিষয় : পরীক্ষা বদলি পরীক্ষা

আপনার মতামত লিখুন

ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫


পরীক্ষা বন্ধ রেখে দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন: বদলি প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশের তারিখ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

featured Image

বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অবশেষে তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আগামী রবিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে তাঁরা স্থগিত হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করবেন বলে বৃহস্পতিবার রাতে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন।

তবে এই আন্দোলনের জেরে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং স্কুল তালা দেওয়ার মতো ঘটনার জন্য ইতিমধ্যে একাধিক শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।

এরই সাথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৫ নেতাসহ ৪২ সহকারী শিক্ষককে পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপপ্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার এক আদেশে ৪২ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় বদলি করেছে। ফলে এই শিক্ষকরা তাঁদের বর্তমান কর্মস্থলের জেলায় থাকতে পারবেন না। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৫ জন শিক্ষক নেতাকে চিহ্নিত করে বদলি করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের নেপথ্যে কারা উসকানি দিয়েছেন বা কারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে।

এর আগে বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকদের অবিলম্বে কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এবং ফিরে না এলে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।

নোয়াখালীতে ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শোকজআন্দোলনের কারণে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে শোকজ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে নোয়াখালী জেলা।

নোয়াখালীর ২৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এসব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিয়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে শিক্ষকরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নেননি, বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছেন, যা 'দায়িত্বহীন আচরণ'।

এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

পাল্টা কর্মসূচি ও আন্দোলন স্থগিতমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারির রাতেও 'প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ' ও 'বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ'-এর পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে বদলি ও শোকজের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা আন্দোলন স্থগিতের কথা জানান।

সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাভঙ্গ বা শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রমাণে সর্বনিম্ন শাস্তি তিরস্কার এবং সর্বোচ্চ চাকরি থেকে বরখাস্তের বিধান রয়েছে।

চাকরি আইনের দশম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর আচরণ এবং শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিধান অনুসরণক্রমে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা রুজু ও পরিচালনা করতে পারবে।

এই আইনের শাস্তিতে বলা হয়েছে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কার্যধারায় দোষী সাব্যস্ত কোনো কর্মচারীকে এতদসংক্রান্ত বিধির বিধান সাপেক্ষে, নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক লঘু বা গুরুদণ্ড আরোপ করতে পারবে, যথা—

লঘু দণ্ডসমূহ—তিরস্কার; নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ; বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনমিতকরণ; কোনো আইন বা সরকারি আদেশ অমান্যকরণ অথবা কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সংঘটিত হইলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়।

গুরুদণ্ডসমূহ—নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ; বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; চাকরি হইতে অপসারণ; চাকরি হইতে বরখাস্ত।

 

এনএম/ধ্রুবকন্ঠ


ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

“তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম”

কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত