ওজন কমাতে কোন আলু উপকারী বেশি
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন হলো, মিষ্টি আলু কি সাধারণ আলুর চেয়ে ভালো? দুটিই আমাদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এগুলোতে প্রায় একই পরিমাণ ক্যালরি থাকে। একটি মাঝারি আকারের মিষ্টি আলু বা আলুতে প্রায় ১৫০ ক্যালরি থাকে। তবে, পার্থক্যটা হলো তাদের পুষ্টি উপাদানে। মিষ্টি আলু তার প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ এবং ফাইবারের জন্য পরিচিত। অন্যদিকে আলুকে শক্তি,
পটাশিয়াম এবং পেট ভরিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সঠিক পছন্দটি নির্ভর করে আপনার শরীরের চাহিদা এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর।মিষ্টি আলুকে একটি সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটি বিটা-ক্যারোটিনে সমৃদ্ধ,
যা দৃষ্টিশক্তি, ত্বক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য উপকারী।এর কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ওজন কমাতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য এটিকে একটি ভালো বিকল্প। এটি ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, ফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে
আলু
একটি
বহুল
ব্যবহৃত
সবজি।
প্রায়
সবরকমের
তরকারির
সঙ্গে
এটি
মানিয়ে
যায়।সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করলে আলুও ওজন কমানোর একটি নিশ্চিত উপায় হতে পারে। মিষ্টি আলু ও আলু দেখতে একই রকম হলেও এগুলো দুটি ভিন্ন গাছ থেকে আসে। পুষ্টিগতভাবে আলু পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা সঠিক পেশি কার্যকারিতা এবং শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।একটি মাঝারি আলুতে প্রায় ৬২০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে, যেখানে মিষ্টি আলুতে থাকে প্রায় ৪৫০ মিলিগ্রাম। যদি ব্যায়ামের পর আপনার পেশিতে টান ধরে বা অতিরিক্ত ঘাম হয়, তবে আলু আপনার জন্য উপকারী হতে পারে।রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ ওজন কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম,
যার কারণে এটি ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার ঝুঁকি কমায়।আলুর জিআই নির্ভর করে রান্নার পদ্ধতির ওপর। সিদ্ধ আলু বেক করা বা ভাজা আলুর চেয়ে ভালো। যদি আলুর সঙ্গে প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া হয়,
তবে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণযোগ্য হয়।ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ফাইবার একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে কারণ এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। এই ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু কিছুটা এগিয়ে। একটি মাঝারি আকারের মিষ্টি আলুতে প্রায় ৪ গ্রাম ফাইবার থাকে,
যেখানে একই আকারের আলুতে থাকে প্রায় ২ গ্রাম।বেশি ফাইবার মানে ভালো হজম,
ভালো অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও কম ক্ষুধা লাগা। আপনার যদি দ্রুত ক্ষুধা লাগে বা নাস্তা করার অভ্যাস থাকে,
তবে মিষ্টি আলু আপনার জন্য সেরা।অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু স্পষ্টভাবে জয়ী হয়। এতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়,
যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বেগুনি মিষ্টি আলুতে আরো বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে।আলুতেও কিছু ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে,
তবে এর পরিমাণ মিষ্টি আলুর চেয়ে কম। দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য, ওজন কমানো এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধির জন্য মিষ্টি আলু বেশি উপকারী।একটি আলু বা মিষ্টি আলু কতটা স্বাস্থ্যকর, তা অনেকাংশে নির্ভর করে এটি কিভাবে রান্না করা হচ্ছে তার ওপর। এই দুটি সবজিই ডুবো তেলে ভাজলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। সিদ্ধ করা,
ভাপানো,
বেক করা বা হালকা করে রোস্ট করাই হলো সেরা উপায়।মিষ্টি আলু চাট,
সালাদ বা ভর্তা হিসেবে খেতে পারেন। আলু সিদ্ধ করাও একটি ভালো উপায় এবং এটি তরকারি বা স্যুপে যোগ করা যেতে পারে। সঠিক রান্নার পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি এর পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে পারেন।ওজন কমানোর জন্য কোনো একটি আলু পুরোপুরি সঠিক বা ভুল নয়। আপনি যদি মিষ্টি স্বাদ পছন্দ করেন এবং আরো বেশি ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চান,
তবে মিষ্টি আলু বেছে নিন। আপনি যদি একটি সাধারণ,
পেট ভরানো ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার চান,
তবে আলুও ঠিক আছে।সবচেয়ে ভালো উপায় হলো,
পরিমিত পরিমাণে উভয় সবজিকেই আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি হলো ভারসাম্য, সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়া এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা।সূত্র
: আজতক বাংলা
এনএম/ধ্রুবকন্ঠ