বন্ধু আর কয়েকজন
সিনিয়র-জুনিয়র মিলে মজার ছলেই শুরু করেছিলেন ‘রাকসু আর্কাইভ’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক স্বতঃস্ফূর্ত অনুষ্ঠান। ফেসবুক পেজও বলা যায়।
কাজ ভাগ করা ছিল। কেউ ভিডিও করতেন, কেউ করতেন সম্পাদনা। বেশ কয়েকটি পর্ব উপস্থাপনের
দায়িত্ব পেয়েছিলেন চারুকলা অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম।
‘হ্যালো, আমি
নাফিসা’—এই হলো তাঁর ইন্ট্রো। ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করতেন তিনি, তুলে
ধরতেন রাকসু নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশার কথা। নাফিসার উচ্ছল উপস্থাপন যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
গণ্ডি পেরিয়ে আরও অনেকের নজর কাড়বে, তিনি নিজেও ভাবেননি।
শুধু উপস্থাপনাই
নয়, ছোটবেলা থেকে টুকটাক গান করেন, ছবি আঁকেন, আবৃত্তি করেন নাফিসা। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের
সঙ্গে তাঁর পথচলা শুরু মায়ের হাত ধরে। মা কাজ করার সময় গুনগুনিয়ে গাইতেন। যার প্রভাব
পড়েছে নাফিসাদের তিন ভাইবোনের ওপর।
নাফিসা বলেন,
‘আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে মা। মা বলত, যা-ই করি না কেন, যেন ভদ্র ও শালীনভাবে
করি। ছোটবেলায় তাঁর কাছেই ছবি আঁকা শেখা। আবৃত্তির প্রোগ্রামগুলোতেও মা নিয়ে যেতেন।
তিনি খুব চাইতেন, আমরা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকি। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বরে
কোনো প্রোগ্রাম হলে মা নিয়ে যেতেন।’
কলেজে পড়ার
সময় ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’ ও ‘কিশোর কিশোরী সম্মেলন’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন।
দুটোতেই ছিলেন বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা ১০-এর মধ্যে।
রাকসু আর্কাইভের
সঙ্গে যুক্ততা কীভাবে? নাফিসা জানান, প্ল্যাটফর্মটা নিজেরাই কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে
গড়ে তুলেছেন। যখন গ্রুপের সবার কাছেই বিভিন্ন প্যানেল থেকে রাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করার প্রস্তাব আসছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজেরা মিলেই একটা প্যানেল দেবেন। কিন্তু
পরে ভেবে দেখেন, নির্বাচনটা আসলে তাঁদের জন্য নয়। তাহলে কী করা? রাকসু নিয়েই তো অন্য
কিছু করা যায়!
একদিন ক্লাসে
পাশের এক বন্ধু বলছিলেন, ‘রাকসু তো রাজনৈতিক বিষয়, রাজনীতি ভালো লাগে না।’ কথাটা নাফিসাকে
বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। মনে হয়েছিল, অনেকে জানেই না বিষয়টা আসলে কী। এ কারণেই ছাত্র সংসদ
সম্পর্কে অনেকের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে।
এ ভুল ধারণা
ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হয় কাজ। রাকসু আর্কাইভের দলে নাফিসা ছাড়াও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
বিভিন্ন ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী—রিংকু, রাহি, লাবণ্য, আহাদ, প্রথমা, নিরব, মিনহাজ,
জয়ন্ত, জিয়াম, কাব্যসহ অনেকে।
উপস্থাপনা নাফিসার
সব সময়ই ভালো লাগে। কেউ সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বললে, কণ্ঠস্বর ভালো লাগলে, উচ্চারণ
সুন্দর হলে নাফিসা বুঁদ হয়ে শোনেন। উপস্থাপক ও অভিনেত্রী রুমানা মালিক মুনমুন তাঁর
প্রিয়।
শুধু উপস্থাপনাই নয়, ছোটবেলা থেকে টুকটাক গান করেন, ছবি আঁকেন, আবৃত্তি করেন নাফিসাছবি: নাফিসার সৌজন্যে
নাফিসা উপস্থাপনার
পাশাপাশি আরও কিছু শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন। কাজ
করেছেন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতেও। কলেজের পর থেকে যুক্ত ছিলেন একটি উন্নয়ন সংস্থার
সঙ্গে। বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করেছেন তিনি।
রাকসু আর্কাইভে
কাজ করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন নাফিসা। রাস্তাঘাটে কেউ কেউ তাঁকে চিনে ফেলছেন। বন্ধু,
সিনিয়র, জুনিয়ররা নতুন করে জানছেন—এটাও এক মজার অভিজ্ঞতা। আরেকটা মজার অভিজ্ঞতা শোনালেন
নাফিসা, ‘আমি একদিন ভার্সিটির গেট দিয়ে আসছি। সেখানে রোভার স্কাউটের সদস্যরা আইডি কার্ড
চেক করে। আমার সঙ্গে আইডি কার্ড না থাকায় দেখাতে পারছিলাম না। তখন পাশ থেকে একজন মেয়ে
সদস্য এসে বলল “উনি রাকসু আর্কাইভের নাফিসা আপু। তুই ওনার কাছ থেকে কার্ড দেখতে চাচ্ছিস?
আপু আপনি যান তো।” খুব মজা লেগেছিল শুনে।’
নাফিসা ভবিষ্যতেও
উপস্থাপনা করতে চান। রুমানা মালিক মুনমুনকে যেভাবে অনেকে মনে রেখেছে, নাফিসা চান তাঁকেও
লোকে মনে রাখুক। পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজেও যুক্ত থাকতে চান চারুকলার এই শিক্ষার্থী।
.png)
বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বন্ধু আর কয়েকজন
সিনিয়র-জুনিয়র মিলে মজার ছলেই শুরু করেছিলেন ‘রাকসু আর্কাইভ’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক স্বতঃস্ফূর্ত অনুষ্ঠান। ফেসবুক পেজও বলা যায়।
কাজ ভাগ করা ছিল। কেউ ভিডিও করতেন, কেউ করতেন সম্পাদনা। বেশ কয়েকটি পর্ব উপস্থাপনের
দায়িত্ব পেয়েছিলেন চারুকলা অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম।
‘হ্যালো, আমি
নাফিসা’—এই হলো তাঁর ইন্ট্রো। ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করতেন তিনি, তুলে
ধরতেন রাকসু নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশার কথা। নাফিসার উচ্ছল উপস্থাপন যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
গণ্ডি পেরিয়ে আরও অনেকের নজর কাড়বে, তিনি নিজেও ভাবেননি।
শুধু উপস্থাপনাই
নয়, ছোটবেলা থেকে টুকটাক গান করেন, ছবি আঁকেন, আবৃত্তি করেন নাফিসা। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের
সঙ্গে তাঁর পথচলা শুরু মায়ের হাত ধরে। মা কাজ করার সময় গুনগুনিয়ে গাইতেন। যার প্রভাব
পড়েছে নাফিসাদের তিন ভাইবোনের ওপর।
নাফিসা বলেন,
‘আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে মা। মা বলত, যা-ই করি না কেন, যেন ভদ্র ও শালীনভাবে
করি। ছোটবেলায় তাঁর কাছেই ছবি আঁকা শেখা। আবৃত্তির প্রোগ্রামগুলোতেও মা নিয়ে যেতেন।
তিনি খুব চাইতেন, আমরা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকি। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বরে
কোনো প্রোগ্রাম হলে মা নিয়ে যেতেন।’
কলেজে পড়ার
সময় ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’ ও ‘কিশোর কিশোরী সম্মেলন’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন।
দুটোতেই ছিলেন বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা ১০-এর মধ্যে।
রাকসু আর্কাইভের
সঙ্গে যুক্ততা কীভাবে? নাফিসা জানান, প্ল্যাটফর্মটা নিজেরাই কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে
গড়ে তুলেছেন। যখন গ্রুপের সবার কাছেই বিভিন্ন প্যানেল থেকে রাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করার প্রস্তাব আসছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজেরা মিলেই একটা প্যানেল দেবেন। কিন্তু
পরে ভেবে দেখেন, নির্বাচনটা আসলে তাঁদের জন্য নয়। তাহলে কী করা? রাকসু নিয়েই তো অন্য
কিছু করা যায়!
একদিন ক্লাসে
পাশের এক বন্ধু বলছিলেন, ‘রাকসু তো রাজনৈতিক বিষয়, রাজনীতি ভালো লাগে না।’ কথাটা নাফিসাকে
বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। মনে হয়েছিল, অনেকে জানেই না বিষয়টা আসলে কী। এ কারণেই ছাত্র সংসদ
সম্পর্কে অনেকের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে।
এ ভুল ধারণা
ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হয় কাজ। রাকসু আর্কাইভের দলে নাফিসা ছাড়াও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
বিভিন্ন ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী—রিংকু, রাহি, লাবণ্য, আহাদ, প্রথমা, নিরব, মিনহাজ,
জয়ন্ত, জিয়াম, কাব্যসহ অনেকে।
উপস্থাপনা নাফিসার
সব সময়ই ভালো লাগে। কেউ সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বললে, কণ্ঠস্বর ভালো লাগলে, উচ্চারণ
সুন্দর হলে নাফিসা বুঁদ হয়ে শোনেন। উপস্থাপক ও অভিনেত্রী রুমানা মালিক মুনমুন তাঁর
প্রিয়।
শুধু উপস্থাপনাই নয়, ছোটবেলা থেকে টুকটাক গান করেন, ছবি আঁকেন, আবৃত্তি করেন নাফিসাছবি: নাফিসার সৌজন্যে
নাফিসা উপস্থাপনার
পাশাপাশি আরও কিছু শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন। কাজ
করেছেন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতেও। কলেজের পর থেকে যুক্ত ছিলেন একটি উন্নয়ন সংস্থার
সঙ্গে। বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করেছেন তিনি।
রাকসু আর্কাইভে
কাজ করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন নাফিসা। রাস্তাঘাটে কেউ কেউ তাঁকে চিনে ফেলছেন। বন্ধু,
সিনিয়র, জুনিয়ররা নতুন করে জানছেন—এটাও এক মজার অভিজ্ঞতা। আরেকটা মজার অভিজ্ঞতা শোনালেন
নাফিসা, ‘আমি একদিন ভার্সিটির গেট দিয়ে আসছি। সেখানে রোভার স্কাউটের সদস্যরা আইডি কার্ড
চেক করে। আমার সঙ্গে আইডি কার্ড না থাকায় দেখাতে পারছিলাম না। তখন পাশ থেকে একজন মেয়ে
সদস্য এসে বলল “উনি রাকসু আর্কাইভের নাফিসা আপু। তুই ওনার কাছ থেকে কার্ড দেখতে চাচ্ছিস?
আপু আপনি যান তো।” খুব মজা লেগেছিল শুনে।’
নাফিসা ভবিষ্যতেও
উপস্থাপনা করতে চান। রুমানা মালিক মুনমুনকে যেভাবে অনেকে মনে রেখেছে, নাফিসা চান তাঁকেও
লোকে মনে রাখুক। পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজেও যুক্ত থাকতে চান চারুকলার এই শিক্ষার্থী।
.png)
আপনার মতামত লিখুন