আপনার শরীরে ওজন বাড়ার প্রধান কারণ হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার। কারণ পরিমাণ ও উপাদান সম্পর্কে ধারণা না থাকলে এ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই সকালে নাশতার পর অল্প মিষ্টি বা হালকা খাবার হিসেবে প্রোটিন বার খেতে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু প্রোটিন বেশি থাকলে পেট ভরবে, ওজন কমবে—এমন ধারণায় খেয়ে থাকে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছি এ ভাবনাটাই অনেককে আশ্বস্ত করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, নিয়ম মেনে খাওয়ার পরও ওজন কমছে না, বরং কোথাও যেন আটকে যাচ্ছে।
একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন—এমন কিছু খাবার রয়েছে যা আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, সঠিক ধারণা ছাড়া বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা ওজন কমানোর গতি কমিয়ে দিতে পারে। আসলে খাবারের নাম বা পরিচয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এর পুষ্টি উপাদান এবং গ্রহণের সঠিক মাত্রা।
তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ সারা গ্যারোন ইটদিস নটদ্যাট ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছেন, এ ধরনের খাবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার। আর এতে লুকিয়ে থাকে অনেক ক্যালরি ও চিনি। এক টুকরা বারই অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ খাবারের সমান শক্তি সরবরাহ করে ফেলে। ফলে নাশতার বদলে এটি খেলে সারাদিনের মোট ক্যালরি হিসাব এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।
সারা গ্যারোন আরও বলেন, দই অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে সব দই এক রকম নয়। স্বাদযুক্ত দই প্রাকৃতিক দইয়ের গুণ থাকলেও তাতে অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয়। এই চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ফলে কিছু সময় পর আবার খিদে লাগে। সে কারণে ওজন কমাতে চাইলে খাবারের সুবিধার চেয়ে তার সামগ্রিক প্রভাব বোঝা জরুরি। এমন দই খেলে নিয়মিত ওজন কমার বদলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ দই বা অল্প চিনি যুক্ত দই তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
তিনি বলেন, আর বাদাম ও বীজ স্বাস্থ্যকর এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে মিশ্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় উপাদান নির্বাচনে। অনেক মিশ্রণে বাদামের চেয়ে বেশি থাকে চকলেট বা চিনি মাখানো শুকনো ফল। এতে স্বাদ বাড়লেও ক্যালরির পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়। হাতে নিয়ে খেতে খেতে কখন যে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তা বোঝা যায় না। ফলাফল হিসেবে ওজন কমার বদলে ক্যালরি জমা হতে থাকে।
এ পুষ্টিবিদ বলেন, অনেকের কাছেই ভাজা ওটসের মিশ্রণ শব্দটির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনের ছবি জড়িয়ে আছে। সকালের নাশতায় বা হালকা খাবার হিসেবে এটি জনপ্রিয়। কিন্তু ভাজা ওটসের মিশ্রণে থাকা শস্য ও আঁশ ভালো হলেও এতে চর্বি ও চিনি বেশি থাকতে পারে। সমস্যাটা হয় পরিমাণে।
সারা গ্যারোন বলেন, আবার তরল খাবারের বিভ্রান্তি অনেক। ফল ও সবজি একসঙ্গে নেওয়ার সহজ উপায় হিসেবে স্মুদি অনেকের পছন্দ হতে পারে। কিন্তু স্মুদি বানাতে গিয়ে বাদামের মাখন, মধু বা ঘন দুধ বেশি ব্যবহার করলে এটি অল্প সময়েই শক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। আরও একটি সমস্যা হলো— তরল খাবার চিবিয়ে খাওয়ার মতো তৃপ্তি দেয় না। ফলে স্মুদি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার খেতে ইচ্ছে করে। অনেকেই এক বাটির বদলে দুই বাটি খেয়ে ফেলেন, যা সহজেই দৈনিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শক্তি যোগ করে দেয়। সচেতন না হলে এই অভ্যাস ওজন কমানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে স্মুদির উপাদান ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
সতর্ক করে এ পুষ্টিবিদ বলেন, চর্বি কমাতে গিয়ে অনেক সময় চিনি বা কৃত্রিম উপাদান যোগ করে। এতে স্বাদ ঠিক থাকলেও শরীরের জন্য তা সহায়ক হয় না। বরং অল্প পরিমাণে সাধারণ মিষ্টান্ন খাওয়া অনেক ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিসংগত। আর শুকনো ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর, কিন্তু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটু সাবধানে খাওয়া দরকার। পানি কমে যাওয়ায় শুকনো ফলে শক্তির ঘনত্ব বেশি থাকে। অল্প পরিমাণেই অনেক ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করে।
.png)
বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
আপনার শরীরে ওজন বাড়ার প্রধান কারণ হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার। কারণ পরিমাণ ও উপাদান সম্পর্কে ধারণা না থাকলে এ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই সকালে নাশতার পর অল্প মিষ্টি বা হালকা খাবার হিসেবে প্রোটিন বার খেতে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু প্রোটিন বেশি থাকলে পেট ভরবে, ওজন কমবে—এমন ধারণায় খেয়ে থাকে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছি এ ভাবনাটাই অনেককে আশ্বস্ত করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, নিয়ম মেনে খাওয়ার পরও ওজন কমছে না, বরং কোথাও যেন আটকে যাচ্ছে।
একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন—এমন কিছু খাবার রয়েছে যা আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, সঠিক ধারণা ছাড়া বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা ওজন কমানোর গতি কমিয়ে দিতে পারে। আসলে খাবারের নাম বা পরিচয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এর পুষ্টি উপাদান এবং গ্রহণের সঠিক মাত্রা।
তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ সারা গ্যারোন ইটদিস নটদ্যাট ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছেন, এ ধরনের খাবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার। আর এতে লুকিয়ে থাকে অনেক ক্যালরি ও চিনি। এক টুকরা বারই অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ খাবারের সমান শক্তি সরবরাহ করে ফেলে। ফলে নাশতার বদলে এটি খেলে সারাদিনের মোট ক্যালরি হিসাব এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।
সারা গ্যারোন আরও বলেন, দই অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে সব দই এক রকম নয়। স্বাদযুক্ত দই প্রাকৃতিক দইয়ের গুণ থাকলেও তাতে অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয়। এই চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ফলে কিছু সময় পর আবার খিদে লাগে। সে কারণে ওজন কমাতে চাইলে খাবারের সুবিধার চেয়ে তার সামগ্রিক প্রভাব বোঝা জরুরি। এমন দই খেলে নিয়মিত ওজন কমার বদলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ দই বা অল্প চিনি যুক্ত দই তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
তিনি বলেন, আর বাদাম ও বীজ স্বাস্থ্যকর এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে মিশ্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় উপাদান নির্বাচনে। অনেক মিশ্রণে বাদামের চেয়ে বেশি থাকে চকলেট বা চিনি মাখানো শুকনো ফল। এতে স্বাদ বাড়লেও ক্যালরির পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়। হাতে নিয়ে খেতে খেতে কখন যে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তা বোঝা যায় না। ফলাফল হিসেবে ওজন কমার বদলে ক্যালরি জমা হতে থাকে।
এ পুষ্টিবিদ বলেন, অনেকের কাছেই ভাজা ওটসের মিশ্রণ শব্দটির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনের ছবি জড়িয়ে আছে। সকালের নাশতায় বা হালকা খাবার হিসেবে এটি জনপ্রিয়। কিন্তু ভাজা ওটসের মিশ্রণে থাকা শস্য ও আঁশ ভালো হলেও এতে চর্বি ও চিনি বেশি থাকতে পারে। সমস্যাটা হয় পরিমাণে।
সারা গ্যারোন বলেন, আবার তরল খাবারের বিভ্রান্তি অনেক। ফল ও সবজি একসঙ্গে নেওয়ার সহজ উপায় হিসেবে স্মুদি অনেকের পছন্দ হতে পারে। কিন্তু স্মুদি বানাতে গিয়ে বাদামের মাখন, মধু বা ঘন দুধ বেশি ব্যবহার করলে এটি অল্প সময়েই শক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। আরও একটি সমস্যা হলো— তরল খাবার চিবিয়ে খাওয়ার মতো তৃপ্তি দেয় না। ফলে স্মুদি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার খেতে ইচ্ছে করে। অনেকেই এক বাটির বদলে দুই বাটি খেয়ে ফেলেন, যা সহজেই দৈনিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শক্তি যোগ করে দেয়। সচেতন না হলে এই অভ্যাস ওজন কমানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে স্মুদির উপাদান ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
সতর্ক করে এ পুষ্টিবিদ বলেন, চর্বি কমাতে গিয়ে অনেক সময় চিনি বা কৃত্রিম উপাদান যোগ করে। এতে স্বাদ ঠিক থাকলেও শরীরের জন্য তা সহায়ক হয় না। বরং অল্প পরিমাণে সাধারণ মিষ্টান্ন খাওয়া অনেক ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিসংগত। আর শুকনো ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর, কিন্তু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটু সাবধানে খাওয়া দরকার। পানি কমে যাওয়ায় শুকনো ফলে শক্তির ঘনত্ব বেশি থাকে। অল্প পরিমাণেই অনেক ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করে।
.png)
আপনার মতামত লিখুন