ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

যে ৮ খাবার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে



যে ৮ খাবার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে
ছবি: সংগৃহীত

চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন(ডিএইচটি)। চুল পাতলা হওয়া বেশ হতাশাজনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজারের প্রতিটি শ্যাম্পু, সিরাম বা স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্ট ব্যবহারের পরও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে আমাদের খাবারের প্রভাব চুলের স্বাস্থ্যে কতটা গভীর। কারণ সমস্যার মূল প্রায়ই স্ক্যাল্পের চেয়েও গভীরে থাকে।

ডিএইচটি একটি শক্তিশালী অ্যান্ড্রোজেন হরমোন, যা তখনই তৈরি হয়, যখন ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ নামক এনজাইম টেস্টোস্টেরনকে ডিএইচটি-তে রূপান্তর করে। যখন ডিএইচটি চুলের ফলিকলের রিসেপ্টরে লেগে যায়, তখন তা ধীরে ধীরে ফলিকলের আকার ছোট করতে শুরু করে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফলিকল দুর্বল চুল উৎপন্ন করে এবং শেষে সম্পূর্ণভাবে বৃদ্ধি থেমে যায়। এই প্রক্রিয়াই অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া নামে পরিচিত, যা চুল পাতলা হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি।

ডার্মাটোলজিস্ট ড. বিদুশী জৈন জানান, কিছু খাবার শরীরে ডিএইটি–এর প্রভাব প্রাকৃতিকভাবে কমাতে সহায়তা করতে পারে। কুমড়ার বীজ, টমেটো, গ্রিন টি, আখরোট, পালং শাক এবং ওমেগাসমৃদ্ধ মাছ এমন উপকারী পুষ্টিতে ভরপুর, যা ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ এনজাইমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এই অবস্থায় ৮টি খাবারের কথা বলেছেন ডার্মাটলজিস্ট। কী সেসব খাবার, চলুন জেনে নেওয়া যাক—

৮টি প্রাকৃতিক ডিএইচটি ব্লকিং খাবার

টমেটো

টমেটোর মূল পুষ্টি হচ্ছে লাইকোপেন। এই লাইকোপেন ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ-এর কার্যকলাপ কমাতে সাহায্য করে এবং চুলের ফলিকলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুরক্ষা দেয়।

কিভাবে খাবেন : রান্না করা টমেটো, তরকারি, সস বা স্যুপে ব্যবহার করুন। এতে শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।

কুমড়ার বীজ

কুমড়ার বীজের মূল পুষ্টি হচ্ছে, জিংক ও ফাইটোস্টেরল (বিশেষত বিটা-সিটোস্টেরল)।

এটি বিটা-সিটোস্টেরল শরীরে ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ এনজাইমের কার্যক্ষমতা কমাতে সহায়তা করে, ফলে টেস্টোস্টেরন থেকে ডিএইটি-তে রূপান্তর ধীর হয়। ফলে জিংক হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

কিভাবে খাবেন : সালাদের টপিং হিসেবে বা কুমড়ার বীজের তেল খাবারে ব্যবহার করুন।

গ্রিন টি

ইজিসিজি হচ্ছে গ্রিন টি-এর মূল পুষ্টি। এটি ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ-কে কমাতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে।

কিভাবে খাবেন : দিনে ২–৩ কাপ গ্রিন টি পান করুন।

গাজর

গাজরের মূল পুষ্টি ভিটামিন এ (বিটা-ক্যারোটিন)। এটি স্ক্যাল্প ও সিবাম (তেল) ভারসাম্য বজায় রাখে, যা ডিএইচটি–এর কারণে বিঘ্নিত হওয়া চুলের বৃদ্ধি চক্রকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে।

কিভাবে খাবেন : কাঁচা, রান্না করা বা জুস হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।

পালং শাক ও কেলে

এই শাকের মূল পুষ্টি হলো আয়রন ও কোয়ারসেটিন। এর আয়রন চুলের গোড়া শক্ত রাখতে সাহায্য করে, আর কোয়ারসেটিনের অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি গুণ চুল পড়া কমাতে সহায়ক।

কিভাবে খাবেন : সালাদ, স্মুদি বা হালকা রান্না করে খান।

আখরোট ও বাদাম

আখরোটের মূল পুষ্টি হলো এল-লাইসিন, বায়োটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এটি চুলের প্রোটিন গঠনে সহায়তা করে, পাশাপাশি প্রদাহ কমায় ও অন্যান্য ডিএইচটি–রোধকারী পুষ্টির কার্যকারিতা বাড়ায়।

কিভাবে খাবেন : প্রতিদিন একমুঠো বাদাম বা আখরোটই যথেষ্ট।

সালমন, ম্যাকারেল ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত মাছ

এসব মাছে পাওয়া যায় ওমেগা–৩ ফ্যাটি এসিড। ওমেগা–৩ স্ক্যাল্পের প্রদাহ কমায়, যা অ্যান্ড্রোজেন সম্পর্কিত চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিভাবে খাবেন : সপ্তাহে ২–৩ বার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

বেরি

বেরি ফলের মূল পুষ্টি হলো ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি কোলাজেন তৈরি বাড়ায় এবং চুলের ফলিকলকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়, যা বয়স সম্পর্কিত বা হরমোনজনিত চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিভাবে খাবেন : বেরি ফল দই, স্মুদি বা ওটমিলে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

যখন খাবারই যথেষ্ট নয়

সুষম খাদ্য চুলের স্বাস্থ্যে বড় ভূমিকা রাখে, কিন্তু চিকিৎসা ও সঠিক ট্রিটমেন্টের বিকল্প নয়। যদি চুল পড়া হঠাৎ শুরু হয়, দ্রুত বাড়ে, জায়গাভিত্তিক (প্যাচ আকারে) হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ থাইরয়েড, পুষ্টিহীনতা বা অটোইমিউন সমস্যাও এর কারণ হতে পারে।

ডিএইচটি প্রভাব নিয়ন্ত্রণকারী খাবার, কাজ করে ধীরে। তাই নিয়মিত অভ্যাসের পর ফল দেখতে ৩–৬ মাস সময় লাগতে পারে।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

 

এমএম/ধ্রুবকন্ঠ

বিষয় : জীবন যাপন ৮ খাবার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে

আপনার মতামত লিখুন

ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫


যে ৮ খাবার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে

প্রকাশের তারিখ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫

featured Image

চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন(ডিএইচটি)। চুল পাতলা হওয়া বেশ হতাশাজনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজারের প্রতিটি শ্যাম্পু, সিরাম বা স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্ট ব্যবহারের পরও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে আমাদের খাবারের প্রভাব চুলের স্বাস্থ্যে কতটা গভীর। কারণ সমস্যার মূল প্রায়ই স্ক্যাল্পের চেয়েও গভীরে থাকে।

ডিএইচটি একটি শক্তিশালী অ্যান্ড্রোজেন হরমোন, যা তখনই তৈরি হয়, যখন ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ নামক এনজাইম টেস্টোস্টেরনকে ডিএইচটি-তে রূপান্তর করে। যখন ডিএইচটি চুলের ফলিকলের রিসেপ্টরে লেগে যায়, তখন তা ধীরে ধীরে ফলিকলের আকার ছোট করতে শুরু করে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফলিকল দুর্বল চুল উৎপন্ন করে এবং শেষে সম্পূর্ণভাবে বৃদ্ধি থেমে যায়। এই প্রক্রিয়াই অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া নামে পরিচিত, যা চুল পাতলা হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি।

ডার্মাটোলজিস্ট ড. বিদুশী জৈন জানান, কিছু খাবার শরীরে ডিএইটি–এর প্রভাব প্রাকৃতিকভাবে কমাতে সহায়তা করতে পারে। কুমড়ার বীজ, টমেটো, গ্রিন টি, আখরোট, পালং শাক এবং ওমেগাসমৃদ্ধ মাছ এমন উপকারী পুষ্টিতে ভরপুর, যা ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ এনজাইমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এই অবস্থায় ৮টি খাবারের কথা বলেছেন ডার্মাটলজিস্ট। কী সেসব খাবার, চলুন জেনে নেওয়া যাক—

৮টি প্রাকৃতিক ডিএইচটি ব্লকিং খাবার

টমেটো

টমেটোর মূল পুষ্টি হচ্ছে লাইকোপেন। এই লাইকোপেন ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ-এর কার্যকলাপ কমাতে সাহায্য করে এবং চুলের ফলিকলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুরক্ষা দেয়।

কিভাবে খাবেন : রান্না করা টমেটো, তরকারি, সস বা স্যুপে ব্যবহার করুন। এতে শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।

কুমড়ার বীজ

কুমড়ার বীজের মূল পুষ্টি হচ্ছে, জিংক ও ফাইটোস্টেরল (বিশেষত বিটা-সিটোস্টেরল)।

এটি বিটা-সিটোস্টেরল শরীরে ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ এনজাইমের কার্যক্ষমতা কমাতে সহায়তা করে, ফলে টেস্টোস্টেরন থেকে ডিএইটি-তে রূপান্তর ধীর হয়। ফলে জিংক হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

কিভাবে খাবেন : সালাদের টপিং হিসেবে বা কুমড়ার বীজের তেল খাবারে ব্যবহার করুন।

গ্রিন টি

ইজিসিজি হচ্ছে গ্রিন টি-এর মূল পুষ্টি। এটি ৫-অ্যালফা রিডাক্টেজ-কে কমাতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে।

কিভাবে খাবেন : দিনে ২–৩ কাপ গ্রিন টি পান করুন।

গাজর

গাজরের মূল পুষ্টি ভিটামিন এ (বিটা-ক্যারোটিন)। এটি স্ক্যাল্প ও সিবাম (তেল) ভারসাম্য বজায় রাখে, যা ডিএইচটি–এর কারণে বিঘ্নিত হওয়া চুলের বৃদ্ধি চক্রকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে।

কিভাবে খাবেন : কাঁচা, রান্না করা বা জুস হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।

পালং শাক ও কেলে

এই শাকের মূল পুষ্টি হলো আয়রন ও কোয়ারসেটিন। এর আয়রন চুলের গোড়া শক্ত রাখতে সাহায্য করে, আর কোয়ারসেটিনের অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি গুণ চুল পড়া কমাতে সহায়ক।

কিভাবে খাবেন : সালাদ, স্মুদি বা হালকা রান্না করে খান।

আখরোট ও বাদাম

আখরোটের মূল পুষ্টি হলো এল-লাইসিন, বায়োটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এটি চুলের প্রোটিন গঠনে সহায়তা করে, পাশাপাশি প্রদাহ কমায় ও অন্যান্য ডিএইচটি–রোধকারী পুষ্টির কার্যকারিতা বাড়ায়।

কিভাবে খাবেন : প্রতিদিন একমুঠো বাদাম বা আখরোটই যথেষ্ট।

সালমন, ম্যাকারেল ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত মাছ

এসব মাছে পাওয়া যায় ওমেগা–৩ ফ্যাটি এসিড। ওমেগা–৩ স্ক্যাল্পের প্রদাহ কমায়, যা অ্যান্ড্রোজেন সম্পর্কিত চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিভাবে খাবেন : সপ্তাহে ২–৩ বার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

বেরি

বেরি ফলের মূল পুষ্টি হলো ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি কোলাজেন তৈরি বাড়ায় এবং চুলের ফলিকলকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়, যা বয়স সম্পর্কিত বা হরমোনজনিত চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিভাবে খাবেন : বেরি ফল দই, স্মুদি বা ওটমিলে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

যখন খাবারই যথেষ্ট নয়

সুষম খাদ্য চুলের স্বাস্থ্যে বড় ভূমিকা রাখে, কিন্তু চিকিৎসা ও সঠিক ট্রিটমেন্টের বিকল্প নয়। যদি চুল পড়া হঠাৎ শুরু হয়, দ্রুত বাড়ে, জায়গাভিত্তিক (প্যাচ আকারে) হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ থাইরয়েড, পুষ্টিহীনতা বা অটোইমিউন সমস্যাও এর কারণ হতে পারে।

ডিএইচটি প্রভাব নিয়ন্ত্রণকারী খাবার, কাজ করে ধীরে। তাই নিয়মিত অভ্যাসের পর ফল দেখতে ৩–৬ মাস সময় লাগতে পারে।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

 

এমএম/ধ্রুবকন্ঠ


ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

“তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম”

কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত