নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ছেলের মামলা ও নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন এক বৃদ্ধা মা। আয়েশা আক্তার (৭৯) নামে ভুক্তভোগী ওই মা গত পাঁচ দিন ধরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের এক আত্মীয় বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ওই মা।
আয়েশা আক্তার উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের চরজুবলী গ্রামের মৃত হাজী সিদ্দিক উল্যার স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার দুই ছেলে, পাঁচ মেয়ে। স্বামীর মৃৃত্যুর পর থেকে বড় ছেলে ফয়েজ উল্যাহ আমাকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেই চলছে। বড় ছেলেকে তার বাবা সুবর্ণচরে মোটরসাইকেল শোরুম ও ডিলার ব্যবসা ধরিয়ে দেয়। সে ব্যবসায় দেড় কোটি টাকা লোকসান করে। পরবর্তীতে ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমার অনুরোধে তার বাবা গ্যারান্টার হয়ে সুবর্ণচর ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা সিসি লোন নিয়ে দেন। এক বছর পর সিসি লোন না দিয়ে ব্যাংকের অফিসারের যোগসাজশে স্বাক্ষর জাল করে লোন বর্ধিত করে নেয় ফয়েজ উল্যাহ। বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবা দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্নস্থানে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দেন। এ নিয়ে একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে ফয়েজ উল্যার ইন্ধনে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন নোটিশ ছাড়াই দোকান ভিটি নিলামের নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়।
আয়েশা আক্তার অভিযোগ করে আরও বলেন, একপর্যায়ে সকল ওয়ারিশসহ জমি বিক্রি করে সুদসহ ব্যাংকের ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। তবুও দোকান ভিটি থেকে যায় ফয়েজের দখলে। এভাবে ৩৮ লাখ টাকা যায় তার পকেটে। দোকান ভাড়ার ২৬ হাজার টাকাও দীর্ঘ দিন থেকে ফয়েজ ভোগ করছে। সবার অজান্তে দুই বোনকে নিয়ে ওয়ারিশী সম্পত্তি ৪০ লাখ টাকা বিক্রি করে দেয় ফয়েজ। বিষয়টি জানাজানি হলে আবার সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক ঝগড়ার সূত্রপাত হয়। ছেলের দোকান থাকা অবস্থায় আমার মাসে ৮-১০ হাজার টাকার ওষুধ লাগতো। তা চাইলে সে তার স্ত্রী পপির কথায় আমাকে প্রহার করতো। স্বামীর সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ছেলের নামে লিখে দেওয়ার জন্য আমার ওপর শারীরিক অত্যাচার করে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটায়। বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে মানববন্ধন করিয়ে মিথ্যাচার করে।
এই বৃদ্ধা মা কান্নাকন্ঠে বলেন, পূর্বের ঘটনায় যদি আমার ছেলের বিচার হতো, তাহলে সে আজ আমাকে বাড়ি ছাড়া করার সাহস পেতো না। সরকার ও প্রশাসনের কাছে ছেলে ফয়েজ উল্যাহর যথাযথ বিচার চান আয়েশা আক্তার।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন মিয়া জানান, বৃদ্ধা নারী তার দুই ছেলেসহ এক বাড়িতে বসবাস করতেন। ঘর তোলাকে কেন্দ্র করে ওই বৃদ্ধা নারীর বড় ছেলে মারধরের শিকার হয়। এ ঘটনায় মাসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ফয়েজ উল্যাহর স্ত্রী। ওই মামলায় মাসহ দ্জুনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। পরে বৃদ্ধা নারী জামিনে আসেন।