অচিরেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন কাজ করছে। আজ (১২ নভেম্বর, ২০২৪) সকাল ৯:৩০ টায় চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের আয়োজনে মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদ মিলনায়তনে “Community-based Reduction of plastic Pollution: Case of Circular Economy and Biodegradable Products in Bangladesh” শীর্ষক কর্মশালা ও “Environmentally Sound Disposal of Plastic Wastes” বিষয়ক মুক্ত আলোচনায় চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এ কথা বলেন।
চবি উপাচার্য বলেন, প্লাস্টিক একটি বহুল ব্যবহৃত পরিবেশ দূষণকারী পণ্য। গবেষকদের মতে, ১৯০৭ সাল থেকে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্লাস্টিক বর্জ্য শুধু পরিবেশ দূষণই করেনা, এটি জনস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে তৈরি, যা খাদ্য ও পানিতে মিশে কালক্রমে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। এগুলো মাছসহ জলজ প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে এবং খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানব শরীরেও পৌঁছে যায়। এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক মানব শরীরে ক্যান্সার, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বন্ধ্যাত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের সৌন্দর্যহানি ঘটানোর পাশাপাশি প্রাণিজগতের জন্যও মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য প্রকৃতিতে জমা হলে মাটির উর্বরতা কমায় ও পানি দূষিত করে। প্লাস্টিক দূষণের ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে। এই বর্জ্যের একটি বড় অংশ ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশে থেকে যায়। কারণ প্লাস্টিক প্রাকৃতিকভাবে মাটিতে মেশে না। মাননীয় উপাচার্য বলেন, মানুষ দীর্ঘসময় প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের গবেষকরা প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য ইতোমধ্যে আবিষ্কার করেছেন। এটি তাদের দীর্ঘ গবেষণার ফসল। এ পণ্য যেমনভাবে পরিবেশবান্ধব হবে, একইসাথে দেশের কাঁচামাল ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প খরচে এসব পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করা সহজ হবে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন খান। এতে সভাপতিত্ব করেন চবি মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও গবেষণা দলের সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন মজুমদার এবং চবি মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ও গবেষণা দলের সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে তাদের গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের প্রভাষক জনাব নায়না ইসলাম।
চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, বঙ্গোপসাগর প্লাস্টিক দূষণের বড় হুমকির মুখে। নগর, শিল্প ও সামুদ্রিক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে প্রবেশ করছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন বিপুল মাইক্রোপ্লাস্টিক সাগরে প্রবাহিত হচ্ছে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া, মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয় এবং ‘ঘোস্ট ফিশিং’ বা ভূতুড়ে মৎস্য ফাঁদ হিসাবে সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃত্যু ঘটাচ্ছে। তিনি প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান। মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্লাস্টিকের বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্য আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চাহিদা পূরণে গবেষক, শিল্প উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্টদেরকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন। এ কর্মশালায় গবেষণাদলের সদস্যরা উল্লিখিত বিষয়ে এগিয়ে আসায় তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর, সবুজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে পরিবেশের ক্ষতিকারক পণ্য ব্যবহার না করার জন্য সকলকে তিনি আহবান জানান।
কর্মশালায় উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন এবং নিজ নিজ মতামত ও সুপারিশমালা পেশ করেন। অনুষ্ঠানে চবি বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট Worid Bank এর অর্থায়নে Plastic Free Rivers and Seas for South Asia (PLEASE) প্রকল্পের আওতায়, United Nations Office for Project Services (UNOPS) ও South Asia Cooperative Environment Programme (SACEP) এর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম সিটি কপোর্রেশনে ৪১ টি ওয়ার্ডে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়াও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবস্থাপনা ও প্লাস্টিকের বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা টিম এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গবেষকদল তাদের গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদিত বাঁশের তৈরি চামচ, সুপারি বা নারকেল গাছের তৈরি পরিবেশবান্ধব পণ্য মাননীয় উপাচার্যের অফিস, উপ-উপাচার্যের অফিস, বিভিন্ন অনুষদের ডিন অফিসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে ব্যবহারের জন্য উপহার হিসেবে প্রদান করেন। পরবর্তিতে গবেষকদল তাদের উৎপাদিত পণ্য বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে দিয়ে দেশে প্লাস্টিকের বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।