জাতীয়

ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ারনির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

রোববার (৯ মার্চ) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মাগুরায় ধর্ষণ-নিপীড়নের শিকার শিশুটিকে দেখে আসার পর তিনি সাংবাদিকদের এই কথা বলেন। এ সময় তিনি শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ও সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায় -এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোচ্চার রয়েছে”।

তিনি বলেন, “এ যাবত নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্যও বলেছি। ধর্ষণে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবে। এতে যারা তাদের বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।”

মাগুরার যৌন নিপীড়নের শিকার আট বছরের শিশুটির মামা বলে সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি। কৃত্রিম উপায়ে চলছে তার শ্বাস-প্রশ্বাস।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক আইসিইউ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার সন্ধ্যার দিকে শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়।

এদিকে, মাগুরায় নিপীড়নের শিকার শিশুটির সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিতভাবে এই আদেশ দেন।

এই শিশুটিকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শিশুটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আদালতের কাছে আবেদন জানাই। আদালত এ বিষয়ে আজই আদেশ দেবেন।”

শিশুটির মায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া শিশুটিকে তার বোনের স্বামীর সহায়তায় তাঁর বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি বোনের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তাঁরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।

শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজিব শেখের ভাই রাতুল শেখ (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়েছে। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।

রোববার সকালে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। প্রতিবাদ করেছে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকেরাও।


Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button