অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেছেন, আগামী বছরের
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে একটি
অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সময়মতো ও
পেশাদারিত্বের সঙ্গে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছে।
আজ সোমবার
(১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টা
পরিষদের অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির
দুটি পৃথক বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এ
কথা বলেন।
তিনি বলেন,
‘আপনারা দেখবেন, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ খুব ভালোভাবে সম্পন্ন
করেছে। ভোটার তালিকা সময়মতো প্রস্তুত ও হালনাগাদ করা হয়েছে এবং নির্বাচনের তফসিল
ঘোষণা করা হয়েছে। এখন মূল বিষয় হলো সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করা।’
তিনি আরও বলেন,
‘নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সময়মতো ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে এবং
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে, যা এখন সে অনুযায়ী বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে।‘
ড.
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্বাচন বাস্তবায়ন
করা হবে এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘
তিনি
আরও বলেন, ‘যেসব এলাকা তুলনামূলকভাবে বেশি সংবেদনশীল, সেখানে নিরাপত্তা ও অন্যান্য
ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আর কম সংবেদনশীল এলাকায় কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা
কমিশনের জানা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের
সময়সূচি নিয়ে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক মতভেদ তিনি দেখছেন না এবং দেশের রাজনৈতিক
পরিবেশকে তিনি ‘অনুকূল’ বলে উল্লেখ করেন।‘
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তফসিল নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি। বরং সবাই সর্বসম্মতভাবে
বলেছে যে তফসিলটি উপযুক্ত। এটিই প্রমাণ করে যে সময়সূচি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ড.
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক রয়েছে এবং নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, পরিস্থিতি
আরও শক্তিশালী করা হবে।‘
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তা আরও জোরদার করা হবে।’
সরকারের ঋণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বর্তমান
প্রশাসন মূলত পূর্ববর্তী সরকার থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত চলমান উন্নয়ন
প্রকল্পগুলোকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঋণ নিয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, এই
প্রকল্পগুলোর অনেকগুলো ইতিমধ্যেই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, যদিও সেগুলো
পরিত্যাগ করলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে।‘
ড.
সালেহউদ্দিন আরও বলেন, ‘যদি আমরা এই প্রকল্পগুলোকে মাঝপথেই বন্ধ করে দেই, তাহলে
এটি অর্থনীতিবিদদের মতে ‘ডেডওয়েট লস’-এর সমান হবে, যার অর্থ ইতোমধ্যে ব্যয় করা
অর্থ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে। এটি বিবেচনা করে, আমরা বেশ কয়েকটি চলমান প্রকল্প
বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।‘
তিনি বলেন, ‘সরকার খুব কম নতুন
প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’ আরও বলেন, ‘সরকার কয়েক বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ
করেছে, যা আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় সম্পর্কে তিনি
বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর, নির্বাচন কমিশন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিলের জন্য
বিস্তারিত দাবি জমা দেয়নি।‘
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের অনুরোধ আমাদের
কাছে এলে, আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।‘
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনী সরবরাহ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে এবং
সরকার তার আর্থিক প্রয়োজনীয়তার ওপর কোনও ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করবে না।‘
তিনি
আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জানে তাদের কী প্রয়োজন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘ভোটের দিন ও
সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য রসদ, জনবল ও অন্যান্য সহায়তার ব্যাপারে যখন তারা তাদের
দাবি জানাবে, আমরা তখন তা যাচাই করে দেখব এবং সময়মতো বরাদ্দ নিশ্চিত করব।‘
সাম্প্রতিক উদাহরণ তুলে ধরে তিনি
বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যেই ইসির প্রয়োজনীয়তার প্রতি দ্রুত সাড়া দিতে প্রস্তুত।‘
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘নির্বাচন
কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতে আমরা যেমন দ্রুত পদক্ষেপ
নিয়েছি, তেমনি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা একই কাজ করতে প্রস্তুত।’
এনএম/ধ্রুবকন্ঠ
আপনার মতামত লিখুন