ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

যেভাবে আলোচনার কেন্দ্রে এলেন ওসমান হাদি

ভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিনই ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চ-এর আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। জুলাই আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগ-বিরোধী তীব্র বক্তব্যের কারণে পরিচিত এই নেতা বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানিয়েছে, আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। হাদি তখন রিকশায় ছিলেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ওসমান হাদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনার পর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং তার অবস্থা সংকটাপন্ন।ওসমান হাদি, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ব্যাপক পরিচিতি পান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তার হাত ধরেই গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। এই সংগঠনের ঘোষিত লক্ষ্য হলো—‘সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’।হাদির গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে, বাবা ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু, পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক সময় ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টার সাইফুরস এ শিক্ষকতা করেছেন হাদি। সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করছিলেন বলে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা জানিয়েছেন।চলতি বছর এনসিপির ডাকা মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসুচিতে সংঘর্ষের পর হাদি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন, যা আলোচনার জন্ম দেয়। পরে বিতর্কের মুখে তিনি তার গালিকে ‘মুক্তির মহাকাব্য’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।সম্প্রতি মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন থেকে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং নিয়মিত জনসংযোগ চালাচ্ছিলেন।ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে তাদের লিফলেট বিলি কর্মসূচি ছিল। লিফলেট বিলি শেষে সবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই হামলার খবর আসে।ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ইসরাফিল বলেন, "হাদী ভাই রিকশায় ছিলেন, মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। হাদী ভাই চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সবার কাছে দোয়া চাই।"এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন নাসির। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে এটিকে "আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র" বলে অভিহিত করেন এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। একইসাথে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।এর আগে গত নভেম্বর মাসে হাদি তার ফেসবুক পেইজে পোস্ট করে দাবি করেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাকে ফোন ও মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকরা তাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখছে।   এমএইছ/ধ্রুবকন্ঠ

যেভাবে আলোচনার কেন্দ্রে এলেন ওসমান হাদি