শিশুর কোনো টিকা বাদ পড়লে কী করবেন জেনে নিন
শিশুর
জন্মের পর থেকে তার সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য নির্দিষ্ট সময়
অনুযায়ী টিকা দেওয়া খুবই জরুরি। টিকা শুধু শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিতই
রাখে না বরং অনেক মারাত্মক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে এবং তার দীর্ঘমেয়াদী
স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। নতুন বাবা-মা হিসেবে অনেকেরই টিকাদান প্রক্রিয়া
সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না থাকায় নবজাতকের জন্য কোন কোন টিকা কখন প্রয়োজন তা
জানা নেই। কিন্তু আজকাল নানা ধরনের নতুন নতুন টিকা প্রচলিত হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারি
টিকাদান কর্মসূচিতে কিছু পরিবর্তন আসায় মা-বাবারা কিছুটা বিভ্রান্তিতেও পড়ছেন। বছর
কয়েক আগেও শিশুকে জন্মের পর চারবার টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে গেলেই হতো; এখন নিতে হয়
৬ বার। নতুন যুক্ত হয়েছে নিউমোনিয়ার টিকা (পিসিভি), হাম ও রুবেলার টিকা (এমআর) এবং
পোলিওর ইনজেকশন টিকা (আইপিভি)। আসুন জেনে নিই টিকা দেওয়ার সময় ও নিয়মগুলো।শিশুর
যক্ষ্মা ও বিসিজি টিকা*
সরকারি কর্মসূচিতে যক্ষ্মার (বিসিজি) ও মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা (ওপিভি) জন্মের পরই
দেওয়া যায়। যক্ষ্মার টিকায় হাতে দাগ তৈরি না হলে ১৪ সপ্তাহে আবার তা দিতে হবে।*
৬, ১০ ও ১৪ সপ্তাহে শিশুকে পোলিও টিকা (মুখে খাওয়ার ওপিভি), পেনটা ইনজেকশন
(ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, টিটেনাস, হেপাটাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা—এই পাঁচ রোগের
সম্মিলিত টিকা) দিতে হবে। নিউমোনিয়ার টিকা (পিসিভি ইনজেকশন) দিতে হবে ৬, ১০ ও ১৮
সপ্তাহে।*
পোলিওর ইনজেকশন টিকা দেওয়া হয় ১৪ সপ্তাহে। হাম ও রুবেলার টিকা (এমআর ইনজেকশন)
দেওয়া হয় পূর্ণ ৯ মাস এবং ১৫ মাস বয়সে।*
বেসরকারি পর্যায়েও নানা ধরনের টিকা দেওয়া হয়। যেমন, দেড় মাস বয়সে কলেরার টিকা, ১২
মাস বয়সে চিকেন পক্স বা জলবসন্তের, ১৮ মাস হলে হেপাটাইটিস ‘এ’-এর এবং দুই বছর বয়সে
টাইফয়েডের টিকা দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে
ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিনজাইটিস এবং জলাতঙ্কের টিকাও দেওয়া যাবে। তবে তার আগে ব্যবহারের
মাত্রা, কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নেওয়া জরুরি।শিশুদের
টিকা দেওয়ার নিয়ম সাধারণত
টিকা তিনটি প্রধান ধাপে দেওয়া হয়ঃ জন্মের
সময়: জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাকে টিবি, হেপাটাইটিস বি এবং পোলিওর
মত প্রাথমিক টিকা দেওয়া হয়, যা মারাত্মক সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় সাহায্য করে।নির্দিষ্ট
বয়সে টিকা: জন্মের পর ৬ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১২-১৮ মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত
বিরতিতে বিভিন্ন টিকা দেওয়া হয়, যেমন ডিপথেরিয়া, কক্লাস, টিটেনাস, হাম-রুবেলা,
এবং মেনিনজাইটিসের টিকা। এই টিকাগুলি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে দেওয়া হয় যাতে
শিশুর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়।বুস্টার
ডোজ: কিছু টিকার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সে পুনরায় বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। এটি
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে।শিশুর
টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় শিশুর
টিকাদান নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুদের
শরীরে সময়মতো প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে নানা কারণে টিকা দিতে
দেরি হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্রথমত, শিশুরোগ
বিশেষজ্ঞ বা স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সঠিক
পরামর্শ নিন। তারা বাচ্চার টিকার জন্য একটি নতুন সময়সূচী নির্ধারণ করতে
পারে। এছাড়া,
ক্যাচ-আপ ডোজের মাধ্যমে মিস হওয়া টিকার ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে, যা অনেক টিকার
ক্ষেত্রে অনুমোদিত। স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্যাচ-আপ ডোজের একটি পরিকল্পনা দিয়ে শিশুকে
সঠিক সময়সূচীতে ফিরিয়ে আনতে পারেন। পরবর্তী টিকাগুলি যাতে সময়মতো দেওয়া হয়,
তার জন্য টিকাদান রেকর্ড সংরক্ষণ করা এবং স্মারক,নোট অথবা ইপিআই টিকা কার্ড
ব্যবহার করা যেতে পারে। টিকা
দিতে ভুলে গেলে কী করবেনশিশুর
টিকাদানের নির্দিষ্ট সময়সূচী অনেক বাবা-মায়ের জন্য কঠিন মনে হতে পারে। ব্যস্ততার
কারণে কোনো টিকা দিতে ভুলে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ
নেই—টিকা দিতে ভুলে গেলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত
রাখা সম্ভব।শিশুরোগ
বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন: প্রথমে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে
যোগাযোগ করুন এবং তাদের টিকাদানের তারিখ সম্পর্কে জানিয়ে দিন। বিশেষজ্ঞরা
প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন এবং কোন টিকা কখন দেওয়া উচিত সে সম্পর্কে একটি নতুন
সময়সূচী নির্ধারণ করবেন।
এমএইছ/ধ্রুবকন্ঠ