যে কারণে আলু খাবেন
সমালোচকদের কাছে
অবহেলিত হলেও, সঠিকভাবে রান্না করলে সাধারণ আলু হতে পারে অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য।
সেদ্ধ, ভর্তা, ভাজা বা বেকড—আলু বহু শতাব্দী ধরে খাদ্যাভ্যাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ফিশ অ্যান্ড চিপস, ব্যাংগারস অ্যান্ড ম্যাশ বা সানডে রোস্ট—সব ক্ষেত্রেই আলু যেন
স্বস্তির প্রতীক।সাম্প্রতিক
বছরগুলোয় পাস্তা ও নুডলসের দাপটে এর জনপ্রিয়তা কমেছে। উচ্চ কার্বোহাইড্রেট বা
শর্করা, রক্তে সুগার বাড়ানোর অভিযোগে আলু এখন অনেকের কাছে অপছন্দের। কিন্তু
পুষ্টিবিদদের মতে—এই বদনাম একেবারেই অযৌক্তিক।পুষ্টিবিদ
সোফি ট্রটম্যান বলেন, ‘রোজকার ভাত বা পাস্তার পরিবর্তে সপ্তাহে কয়েকদিন আলু
খাওয়া একটি ভালো বিকল্প। এতে প্রচুর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, ফাইবার ও
রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ রয়েছে—যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি এবং কোলন
ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।’এখন দেখা
যাক, কীভাবে আলু হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যরক্ষাকারী সুপারফুড—যদি ঠিকভাবে খাওয়া
হয়।আলুর স্বাস্থ্য–উপকারিতা :ফাইবার
ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চসমৃদ্ধ
মাঝারি একটি আলুতে থাকে
প্রায় ২ গ্রাম অদ্রবণীয় ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে ও রক্তে শর্করার ভারসাম্য
রক্ষা করে। ঠান্ডা করা রান্না করা আলুতে তৈরি হয় রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ, যা
প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর
আলুতে ভিটামিন সি ও
বি-৬, পটাশিয়াম, ফলেট, ম্যাগনেসিয়ামসহ প্রচুর খনিজ রয়েছে। একটি মাঝারি আলুতে
রয়েছে প্রায় অর্ধেক দিনের প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম—যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কম ক্যালোরিযুক্ত
১০০ গ্রাম সেদ্ধ আলুতে
মাত্র ৮০ ক্যালোরি—যেখানে একই পরিমাণ সেদ্ধ পাস্তায় থাকে প্রায় ২০০ ক্যালোরি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
রঙিন আলু (বেগুনি বা
কমলা) বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে। তবে সাদা আলুও যথেষ্ট পুষ্টিকর।
খুবই পেট ভরানো খাবার
আলু হলো ‘স্যাটাইটি
ইনডেক্স’-এ সবচেয়ে উপরে থাকা খাবার—অর্থাৎ কম ক্যালোরিতে অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে।
আলুর
কিছু সীমাবদ্ধতা :
সোলানিন
অঙ্কুর বেরোনো বা সবুজ
হয়ে যাওয়া আলুতে সোলানিন বেড়ে যায়, যা পেটে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রোটিন কম
আলু কার্বোসমৃদ্ধ হলেও
প্রোটিন ও ফ্যাট কম। তাই মুরগি, মাছ বা ডালজাতীয় প্রোটিনের সাথে খাওয়া ভালো।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি
এটি রক্তে শর্করা দ্রুত
বাড়াতে পারে—ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আলু
কি মোটাতাজা করে?
স্বাভাবিক আলু নয়—বরং
আলুর সাথে ব্যবহৃত চর্বি (বাটার, ক্রিম, চিজ) ও ভাজার পদ্ধতিই ওজন বাড়ায়। চিপস
বা রোস্ট আলুতে ক্যালোরি অনেক বেশি।
কতটা
আলু খাওয়া উচিত?
এনএইচএস জানায়, দৈনিক
খাবারের এক-তৃতীয়াংশ হওয়া উচিত স্টার্চ জাতীয় খাবার, যেমন আলু। তবে প্রতিদিনের
সব কার্বোহাইড্রেট কেবল আলু থেকে নেওয়া উচিত নয়—বৈচিত্র্য ভালো।
সবচেয়ে
স্বাস্থ্যকর রান্নার উপায়
১.
সেদ্ধ আলু—সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর
- ৮৬ ক্যালোরি, ০.১
গ্রাম ফ্যাট
- বাটার না দিলে
সর্বোত্তম
- অলিভ অয়েল বা মসলা
দিয়ে স্বাদ বাড়ানো যায়
২.
বেকড আলু (টপিং ছাড়া)
- ৯৩ ক্যালোরি
- সুস্থ টপিং:
টুনা–গ্রীক দই, মিষ্টি ভুট্টা ইত্যাদি
৩.
রোস্ট আলু
- ১২০ ক্যালোরি (তেল কম
হলে)
- গুজ ফ্যাট বা বিফ
ড্রিপিং ব্যবহার করলে ক্যালোরি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে
- বাজারের ফ্রোজেন রোস্ট
আলু এড়ানো ভালো
৪.
ম্যাশড পটেটো
- ১৮৭ ক্যালোরি
- কম ফ্যাট চাইলে: সেমি-স্কিমড
মিল্ক
- স্কিনসহ ব্যবহার করলে
ফাইবার বাড়ে
৫.
চিপস (দোকানের)
২০২ ক্যালোরি
- অতিরিক্ত তেল,
প্রিজারভেটিভ, কম ফাইবার
- ঘরে তৈরি চিপস অলিভ
অয়েলে হলে অনেক স্বাস্থ্যকর
সবচেয়ে
স্বাস্থ্যকর আলুর প্রকার
- সুইট পটেটো: বেশি
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার
- সাদা আলু: পুষ্টির দিক
থেকে প্রায় সমান
এনএম/ধ্রুবকন্ঠ