ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

জাতি অর্থবহ ভবিষ্যতের সাক্ষী হতে চায়

২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে জাতি এক রক্তিম প্রভাতের সাক্ষী হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের শীর্ষ নেতার ফিরে আসায় ভীষণভাবে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ঘরে ফেরা সব সময়ই আনন্দের; তবে কিছু প্রত্যাবর্তন ইতিহাস হয়ে ওঠে। আর ১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঠিক তেমনই এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দেশের বৃহত্তম জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতা-কর্মীরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন।  তবে প্রতিটি গোলাপেরই কাঁটা থাকে, আর রাজনীতি কখনোই পুরোপুরি গোলাপি পথ নয়।২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ঢাকায় এক বিশাল সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মী ও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তারেক রহমান ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সহযোগিতার আহ্বান জানান।তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ওপর তাঁর অটল বিশ্বাস ঘোষণা করেন এবং মহান আল্লাহর করুণার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করা এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে তাঁর একটি পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী সবাই পাহাড়ের মানুষ হোক বা সমতলের, সমান মর্যাদা পাবে। আমাদের মহান নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে সবার জন্য ন্যায় ও সমতা নিশ্চিত করা হবে। তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের শহীদদের বিশেষ করে শহীদ ওসমান হাদিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং ১৯৭১ ও ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতা বিপ্লবকেও যথাযথ গুরুত্ব দেন।  তিনি বলেন, হাদি গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক অধিকার চেয়েছিলেন। শহীদদের রক্তঋণের দায় স্বীকার করে তিনি দেশের যুবসমাজকে শান্ত, ধৈর্যশীল ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি সতর্ক করেন আধিপত্যবাদী শক্তির এজেন্টরা এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি এমন এক ‘গোলাপের যুদ্ধ’-এর রূপ নিয়েছে, যেখানে অতীতে মিত্র থাকা রাজনৈতিক দলগুলো এখন পরস্পরের মুখোমুখি।বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন এনসিপিসহ ইসলামি শক্তিগুলো রাজনীতিতে এবং আসন্ন নির্বাচনেও একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। অনেকের ধারণা, ইসলামি রাজনীতি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে, আর জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ভিতর ও বাইরে থেকে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। দেশের ইসলামি দলগুলো যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সমর্থন পাচ্ছে বলে মনে করা হয়। তবে জাতীয়তাবাদী শক্তির পেছনে কারা আছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে, আর যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীন এই চার শক্তিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আগস্ট ২০২৪ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত আবার বাংলাদেশে প্রভাব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, তবে বিপ্লবোত্তর রাজনীতিতে তাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান তৈরি করা কঠিন বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তান বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতায় সহায়তা করতে বেশ আগ্রহী বলে প্রতীয়মান। বিপ্লবোত্তর সময়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ পাকিস্তানকে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখতে চায়।কূটনীতি এখন বাংলাদেশের জন্য আগের চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েরই সমর্থন আমাদের দরকার, কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি বজায় রাখতে উচ্চমাত্রার দক্ষতা প্রয়োজন। কাজটি কঠিন হলেও পরবর্তী সরকারের সামনে এর বিকল্প নেই। এখন বিএনপিকে গোলাপের কুঁড়ি সংগ্রহ করে তা প্রজ্ঞা ও পরিপক্বতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় শুধু গোলাপি স্বপ্নে কাজ হবে না। ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে গোটা জাতি প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ। শহীদ ওসমান হাদি দেশে সে অনুভূতির সংকেত জোরালোভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন এবং রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তিনি ভারতের সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন তিনি।বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত ভারতবিরোধী ও ভারতপন্থি। জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর মধ্য দিয়ে ভারতপন্থি রাজনীতির দিন শেষ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রাজনীতি জনগণ চিরতরে প্রত্যাখ্যান করেছে, আর ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতিরও অবসান ঘটেছে। তবে ভারত আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসতে তার সব রকম প্রচেষ্টা চালাতে পারে। আগামী দিনে ভারতীয় আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে জাতি প্রস্তুত। বিএনপিসহ কোনো রাজনৈতিক দলই জনগণের রাজনৈতিক অবস্থানের বিরুদ্ধে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে না। বিএনপির একমাত্র পথ হলো তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শ কঠোরভাবে অনুসরণ করা। এর কম কিছু হলে নিকট ভবিষ্যতে বিএনপির জন্য গোলাপি পথ দেখা কঠিন হবে।তারেক রহমান শিগগিরই এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারেন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি কাজের মানুষ। একটি প্রস্তুত পরিকল্পনা ভালো বিষয়, কিন্তু তার বাস্তবায়নে দরকার রাজনৈতিক দক্ষতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা, যা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে আসে। ধারণা করা হয়, গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর ও সংসদীয় ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থলে বসবাস করে তিনি পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে গত এক দশকেরও বেশি সময় তিনি বাংলাদেশে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও দলকে প্রজ্ঞা ও দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছেন। এখন জাতির পালা তারেক রহমান কীভাবে এই রক্তিম প্রভাতকে একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে রাজনৈতিক সাফল্যে রূপ দেন, তা দেখার। তিনি সৌভাগ্যবান যে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন যিনি একজন গৃহিণী থেকে জিয়াউর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে কেবল সফল নেত্রীই হননি, বরং রাজনীতির কিংবদন্তিতে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন নেত্রীর মর্যাদা অর্জন করেছেন। তারেক রহমানকে প্রমাণ করতেই হবে যে তিনি ও তাঁর দল বাংলাদেশের মানুষের জন্য সর্বোত্তম পছন্দ। তা না হলে তাঁর জন্য সময় খারাপ হতে পারে এবং তাঁর নেতৃত্বের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। আমরা আন্তরিকভাবে তাঁর নতুন রাজনৈতিক যাত্রায় উজ্জ্বল সাফল্য কামনা করি। এই রক্তিম প্রভাত যেন তারেক রহমান ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক অর্থবহ ভবিষ্যতের সাক্ষী হয়।লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক  এনএম/ধ্রুবকন্ঠ

জাতি অর্থবহ ভবিষ্যতের সাক্ষী হতে চায়