ঘুম কেবল শরীরের বিশ্রামের জন্যই নয়, এটি মস্তিষ্কের কোষ মেরামত,
স্মৃতি সংহতকরণ এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখারও একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জৈবিক
প্রক্রিয়া। আধুনিক জীবনে কাজের চাপে কিংবা নানা কারণে অনেকেই পরিপূর্ণ ঘুমাতে
পারেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দীর্ঘদিনের ঘুমের অভাব কি সত্যিই মানুষের আয়ু
কমিয়ে দিতে পারে? বিজ্ঞান ও গবেষণা এই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়।
চলুন জানা যাক আজকের প্রতিবেদনে।
ঘুমের
অভাব কেন আয়ু হ্রাসের
কারণ হতে পারে
বিজ্ঞান ও গবেষণায়
দেখা গেছে, নিয়মিতভাবে রাতে ৭ ঘণ্টার কম ঘুম স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক
প্রভাব ফেলতে পারে, যা পরোক্ষভাবে আয়ু কমিয়ে দিতে পারে।
১. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ঘুমের সময়
শরীর সাইটোকাইনস নামক প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিনগুলো সংক্রমণ ও
প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাব ঘটলে এই সাইটোকাইনসের
উৎপাদন কমে যায়, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর কারণে সর্দি-কাশি
থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
উচ্চরক্তচাপ ও প্রদাহ : ঘুমের সময় শরীরের
রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। অপর্যাপ্ত ঘুম এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, যার
ফলে উচ্চ রক্তচাপ এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
কার্ডিওভাসকুলার রোগ : নিয়মিত ঘুমের ঘাটতি
স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও করোনারি আর্টারি ডিজিজের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে
দেয়, যা আয়ু কমানোর প্রধান কারণ।
৩. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও আলজাইমার্স
ঘুম হলো
মস্তিষ্কের ‘পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া’। ঘুমের সময় মস্তিষ্কের গ্লাইমফ্যাটিক
সিস্টেম বিষাক্ত পদার্থ, যেমন বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিন, অপসারণ করে। এই প্রোটিন
আলজাইমার্স রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। অপর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কে এই বিষাক্ত পদার্থ
জমতে সাহায্য করে, যা স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞানীয় ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৪. ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধি
ঘুমের
অভাবে দুটি প্রধান হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। একটি হলো ঘ্রেলিন, যা ক্ষুধা
বাড়ায়, এবং অন্যটি লেপটিন, যা ক্ষুধা কমায়। ঘুমের অভাব ঘ্রেলিন বাড়িয়ে এবং
লেপটিন কমিয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে। এর ফলে স্থূলতা বাড়ে এবং
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা দেয়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই
দুটি ঘটনাই আয়ুষ্কাল হ্রাসে সহায়ক।
গবেষণা যা বলছে
বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক
ব্যক্তি নিয়মিত ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি যারা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান
তাদের তুলনায় অনেক বেশি। একইভাবে, অতিরিক্ত ঘুম (৯ ঘণ্টার বেশি) বা ঘুমের গুণগত
মান খারাপ হলেও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে।
পরিমিত ঘুম দীর্ঘজীবনের চাবিকাঠি
বিজ্ঞান
স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন ঘুম কেবল দিনের কার্যকারিতার
জন্য নয়, বরং দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্যও অপরিহার্য। ঘুমের অভাব সরাসরি আয়ু
কমালেও এটি বিভিন্ন জীবনঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে সেই কাজটি করে। তাই দীর্ঘায়ু ও
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত
জরুরি।
সূত্র : হিন্দুস্তান
টাইমস
এনএম/ধ্রুবকন্ঠ
.png)
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ঘুম কেবল শরীরের বিশ্রামের জন্যই নয়, এটি মস্তিষ্কের কোষ মেরামত,
স্মৃতি সংহতকরণ এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখারও একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জৈবিক
প্রক্রিয়া। আধুনিক জীবনে কাজের চাপে কিংবা নানা কারণে অনেকেই পরিপূর্ণ ঘুমাতে
পারেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দীর্ঘদিনের ঘুমের অভাব কি সত্যিই মানুষের আয়ু
কমিয়ে দিতে পারে? বিজ্ঞান ও গবেষণা এই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়।
চলুন জানা যাক আজকের প্রতিবেদনে।
ঘুমের
অভাব কেন আয়ু হ্রাসের
কারণ হতে পারে
বিজ্ঞান ও গবেষণায়
দেখা গেছে, নিয়মিতভাবে রাতে ৭ ঘণ্টার কম ঘুম স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক
প্রভাব ফেলতে পারে, যা পরোক্ষভাবে আয়ু কমিয়ে দিতে পারে।
১. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ঘুমের সময়
শরীর সাইটোকাইনস নামক প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিনগুলো সংক্রমণ ও
প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাব ঘটলে এই সাইটোকাইনসের
উৎপাদন কমে যায়, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর কারণে সর্দি-কাশি
থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
উচ্চরক্তচাপ ও প্রদাহ : ঘুমের সময় শরীরের
রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। অপর্যাপ্ত ঘুম এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, যার
ফলে উচ্চ রক্তচাপ এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
কার্ডিওভাসকুলার রোগ : নিয়মিত ঘুমের ঘাটতি
স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও করোনারি আর্টারি ডিজিজের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে
দেয়, যা আয়ু কমানোর প্রধান কারণ।
৩. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও আলজাইমার্স
ঘুম হলো
মস্তিষ্কের ‘পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া’। ঘুমের সময় মস্তিষ্কের গ্লাইমফ্যাটিক
সিস্টেম বিষাক্ত পদার্থ, যেমন বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিন, অপসারণ করে। এই প্রোটিন
আলজাইমার্স রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। অপর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কে এই বিষাক্ত পদার্থ
জমতে সাহায্য করে, যা স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞানীয় ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৪. ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধি
ঘুমের
অভাবে দুটি প্রধান হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। একটি হলো ঘ্রেলিন, যা ক্ষুধা
বাড়ায়, এবং অন্যটি লেপটিন, যা ক্ষুধা কমায়। ঘুমের অভাব ঘ্রেলিন বাড়িয়ে এবং
লেপটিন কমিয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে। এর ফলে স্থূলতা বাড়ে এবং
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা দেয়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই
দুটি ঘটনাই আয়ুষ্কাল হ্রাসে সহায়ক।
গবেষণা যা বলছে
বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক
ব্যক্তি নিয়মিত ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি যারা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান
তাদের তুলনায় অনেক বেশি। একইভাবে, অতিরিক্ত ঘুম (৯ ঘণ্টার বেশি) বা ঘুমের গুণগত
মান খারাপ হলেও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে।
পরিমিত ঘুম দীর্ঘজীবনের চাবিকাঠি
বিজ্ঞান
স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন ঘুম কেবল দিনের কার্যকারিতার
জন্য নয়, বরং দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্যও অপরিহার্য। ঘুমের অভাব সরাসরি আয়ু
কমালেও এটি বিভিন্ন জীবনঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে সেই কাজটি করে। তাই দীর্ঘায়ু ও
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত
জরুরি।
সূত্র : হিন্দুস্তান
টাইমস
এনএম/ধ্রুবকন্ঠ
.png)
আপনার মতামত লিখুন