ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

বাজারে পানির দামে নতুন আলু বিক্রি



বাজারে পানির দামে নতুন আলু বিক্রি
ছবি : সংগৃহীত

দেশের বাজারে নতুন আলুর দামে বড় ধরনের ধস নেমেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম বেশ কমায় ভোক্তারা স্বস্তিবোধ করলেও লোকসান গুনছেন চাষিরা। আলু ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২৫ এর নভেম্বর মাস থেকে কৃষকরা জমি থেকে নতুন আলু তোলা শুরু করেন।

প্রথম দিকে বাজারে নতুন আলুর দাম ছিল কেজিতে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। পরে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমতে থাকে। বর্তমানে দাম বেশ খানিকটা কমে যাওয়ায় কৃষকরা লোকসান দিয়ে নতুন আলু বিক্রি করছেন।

কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, রংপুর, মুন্সীগঞ্জ বগুড়া অঞ্চলে আগাম জাতের নতুন আলু কৃষক পর্যায়ে ১৫ থেকে ১৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ২৭ থেকে ২৯ টাকা। ফলে প্রতি কেজিতে গড়ে ১৩ থেকে ১৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।

রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় গত মৌসুমে প্রায় ৩২ লাখ ৩০ হাজার টন আলু উৎপাদন হলেও ১১৬টি কোল্ড স্টোরেজে এখনো প্রায় লাখ মেট্রিক টন পুরনো আলু অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। সেই আলু বাজারে না যাওয়ায় নতুন আলু আসতেই দামে বড় পতন ঘটে।

হিমাগারে পুরনো আলু মজুদকারীরা পড়েছেন চরম সংকটে। সুযোগে একটি সিন্ডিকেট পুরনো আলুর দাম আরো কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ কৃষক ব্যবসায়ীদের।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়ায় অনেক কৃষক ব্যবসায়ী হিমাগার থেকে আলু তুলতে আসছেন না। একাধিকবার নোটিশ দেওয়ার পরও আলু খালাস না হওয়ায় স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আলু সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

রংপুর কৃষাণ হিমাগারের ম্যানেজার মাজেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আলু খালাস না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে কৃষকের পাশাপাশি হিমাগারগুলোরও ক্ষতি হবে।

কৃষক পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর যেখানে নতুন আলু মাঠেই ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, সেখানে এবার খুচরা বাজারেই ২০ টাকার নিচে বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম অনেক কম থাকায় শুধু রংপুর অঞ্চলেই কৃষকের সম্ভাব্য লোকসানের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিষয়ে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অত্যন্ত হতাশাজনক বিষয় হলোচলতি বছর পুরোটা সময় ধরে আলুর মূল্য এত কম ছিল যে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাননি। এতে আগামী বছর কৃষকরা পর্যাপ্ত আলু উৎপাদনে উৎসাহ হারাতে পারেন, যা ভবিষ্যতে আলুর দাম বেড়ে ভোক্তাদের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করবে। আমরা চাই বাজারে মূল্য স্থিতিশীল থাকুক, পাশাপাশি কৃষক যেন তাঁর উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য পান এবং পরবর্তী মৌসুমে যেন উৎপাদনের মানসিক আর্থিক সক্ষমতা বজায় থাকে।

কৃষকরা বলছেন, আগে যেখানে এক বিঘা আলু চাষে খরচ হতো ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। বীজ আলুর উচ্চমূল্য, সার শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি, সেচের জন্য ডিজেল বিদ্যুতের বাড়তি খরচ কৃষকের লাভের অঙ্ক শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে প্রতি কেজিতে আরো সাত টাকা ব্যয় যোগ হওয়ায় লোকসান বেড়েছে।

রংপুরের দেউতি এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছর খরচ বাড়ে, কিন্তু দাম বাড়ে না। গতবার বড় লোকসান হয়েছে, এবারও নতুন আলুতেই দাম কম, আরো বিপদে পড়ার শঙ্কা।’ বগুড়ায়ও একই পরিস্থিতি।

 


এমএইছ/ধ্রুবকন্ঠ

বিষয় : নতুন আলু বাঁজার

আপনার মতামত লিখুন

ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫


বাজারে পানির দামে নতুন আলু বিক্রি

প্রকাশের তারিখ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

featured Image

দেশের বাজারে নতুন আলুর দামে বড় ধরনের ধস নেমেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম বেশ কমায় ভোক্তারা স্বস্তিবোধ করলেও লোকসান গুনছেন চাষিরা। আলু ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২৫ এর নভেম্বর মাস থেকে কৃষকরা জমি থেকে নতুন আলু তোলা শুরু করেন।

প্রথম দিকে বাজারে নতুন আলুর দাম ছিল কেজিতে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। পরে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমতে থাকে। বর্তমানে দাম বেশ খানিকটা কমে যাওয়ায় কৃষকরা লোকসান দিয়ে নতুন আলু বিক্রি করছেন।

কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, রংপুর, মুন্সীগঞ্জ বগুড়া অঞ্চলে আগাম জাতের নতুন আলু কৃষক পর্যায়ে ১৫ থেকে ১৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ২৭ থেকে ২৯ টাকা। ফলে প্রতি কেজিতে গড়ে ১৩ থেকে ১৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।

রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় গত মৌসুমে প্রায় ৩২ লাখ ৩০ হাজার টন আলু উৎপাদন হলেও ১১৬টি কোল্ড স্টোরেজে এখনো প্রায় লাখ মেট্রিক টন পুরনো আলু অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। সেই আলু বাজারে না যাওয়ায় নতুন আলু আসতেই দামে বড় পতন ঘটে।

হিমাগারে পুরনো আলু মজুদকারীরা পড়েছেন চরম সংকটে। সুযোগে একটি সিন্ডিকেট পুরনো আলুর দাম আরো কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ কৃষক ব্যবসায়ীদের।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়ায় অনেক কৃষক ব্যবসায়ী হিমাগার থেকে আলু তুলতে আসছেন না। একাধিকবার নোটিশ দেওয়ার পরও আলু খালাস না হওয়ায় স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আলু সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

রংপুর কৃষাণ হিমাগারের ম্যানেজার মাজেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আলু খালাস না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে কৃষকের পাশাপাশি হিমাগারগুলোরও ক্ষতি হবে।

কৃষক পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর যেখানে নতুন আলু মাঠেই ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, সেখানে এবার খুচরা বাজারেই ২০ টাকার নিচে বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম অনেক কম থাকায় শুধু রংপুর অঞ্চলেই কৃষকের সম্ভাব্য লোকসানের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিষয়ে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অত্যন্ত হতাশাজনক বিষয় হলোচলতি বছর পুরোটা সময় ধরে আলুর মূল্য এত কম ছিল যে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাননি। এতে আগামী বছর কৃষকরা পর্যাপ্ত আলু উৎপাদনে উৎসাহ হারাতে পারেন, যা ভবিষ্যতে আলুর দাম বেড়ে ভোক্তাদের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করবে। আমরা চাই বাজারে মূল্য স্থিতিশীল থাকুক, পাশাপাশি কৃষক যেন তাঁর উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য পান এবং পরবর্তী মৌসুমে যেন উৎপাদনের মানসিক আর্থিক সক্ষমতা বজায় থাকে।

কৃষকরা বলছেন, আগে যেখানে এক বিঘা আলু চাষে খরচ হতো ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। বীজ আলুর উচ্চমূল্য, সার শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি, সেচের জন্য ডিজেল বিদ্যুতের বাড়তি খরচ কৃষকের লাভের অঙ্ক শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে প্রতি কেজিতে আরো সাত টাকা ব্যয় যোগ হওয়ায় লোকসান বেড়েছে।

রংপুরের দেউতি এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছর খরচ বাড়ে, কিন্তু দাম বাড়ে না। গতবার বড় লোকসান হয়েছে, এবারও নতুন আলুতেই দাম কম, আরো বিপদে পড়ার শঙ্কা।’ বগুড়ায়ও একই পরিস্থিতি।

 


এমএইছ/ধ্রুবকন্ঠ


ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

“তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম”

কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত