ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

কুয়াশা ও কনকনে শীতে স্থবির আক্কেলপুর, দ্বিমুখী চাপে কৃষকরা



কুয়াশা ও কনকনে শীতে স্থবির আক্কেলপুর, দ্বিমুখী চাপে কৃষকরা
ছবি: রিফাত হোসেন মেশকাত

শীত মৌসুম শুরু হতেই জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার দাপটে জনজীবন হয়ে উঠেছে স্থবির। ঘর থেকে বের হওয়াই যেন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা চার দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। চারপাশ ঢেকে থাকছে কুয়াশার সাদা চাদরে। কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের প্রভাবে তাপমাত্রা গতকাল ছিল ১১ দশমিক ৭ আজ ১২ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এই স্যাঁতসেঁতে ও ঠান্ডা আবহাওয়া একদিকে যেমন কিছু শীতকালীন ফসলের জন্য উপকারী হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে অনেক অর্থকরী ফসলে সৃষ্টি করছে মারাত্মক ঝুঁকি। ফলে লাভ ও ক্ষতির এই দ্বিমুখী প্রভাব নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা।

উপজেলার পাশ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা কৃষি আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহজুড়ে উত্তরাঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৯ শতাংশে অবস্থান করছে, যা ফসলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আক্কেলপুর উপজেলায় আলু চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। এছাড়া টমেটো ১০ হেক্টর, সিম ১০ হেক্টর, বেগুন ৪০ হেক্টর, গাজর ১০ হেক্টরসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চাষ ব্যাপকভাবে হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হালকা কুয়াশা ও শীতল আবহাওয়া শীতকালীন সবজি চাষের জন্য তুলনামূলকভাবে অনুকূল। বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মটরশুঁটি, পালং শাক, লাল শাক, মূলা ও গাজরের মতো ফসলে কুয়াশার কারণে জমিতে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকছে। এতে সেচের প্রয়োজন কিছুটা কমছে এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ভালো হচ্ছে। উপজেলার অনেক কৃষক আশা করছেন, চলতি মৌসুমে এসব সবজির ফলন তুলনামূলকভাবে ভালো হতে পারে।

একইভাবে সরিষা ও গম চাষেও সীমিত পরিমাণ কুয়াশা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকায় গাছের বৃদ্ধি ও দানা গঠনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা ভালো ফলনের আশার কথা জানাচ্ছেন কৃষকরা।

তবে কুয়াশা যখন ঘন ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, তখনই দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। অতিরিক্ত কুয়াশা ও দীর্ঘ সময় সূর্যের আলো না পাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়ছে ধানের বীজতলা, আলু, টমেটো, মরিচ, বেগুন ও পেঁয়াজের মতো অর্থকরী ফসল। এসব ফসলে ছত্রাকজনিত রোগ, পাতাপচা, ডাউনি মিলডিউ, ব্লাইট ও লিফ কার্ল রোগের প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জমিতে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যেতে দেখা গেছে। ফল পচে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের আওয়ালগাড়ী গ্রামের কৃষক জলিল মণ্ডল বলেন, সকালে কুয়াশা না কাটলে জমি শুকাতে দেরি হয়। কয়েক দিন ধরে কুয়াশার শিশির রাত-দিন সমানভাবে পড়ছে। জমিতে দীর্ঘ সময় ভেজাভাব থাকায় রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এক জমি থেকে অন্য জমিতে সংক্রমণ ঘটছে। ফসলের পাতায় অতিরিক্ত শিশির থাকার কারণে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও তেমন সুফল মিলছে না। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে আক্কেলপুর পৌরসভার কৃষক  আল রাফি  জানান, এ বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে মাটির ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য বাজার থেকে খাটো–খাটারি প্যারেট ধান ২ কেজির প্যাকেট হিসেবে মোট ৬ কেজি বীজ ৯০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে এবার তার ধানের বীজতলা ঠিকমতো হয়নি। অর্ধেকের বেশি বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।  তিনি বলেন, এই বীজতলা নিয়ে আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে আবহাওয়া থাকলে হয়তো সব বীজতলাই নষ্ট হয়ে যাবে। তখন সঠিক সময়ে ধান লাগানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

কয়েকজন কৃষক জানান, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে ধান ও সবজি-দুই ক্ষেত্রেই লাভের বদলে ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়বে। তারা দ্রুত সরকারি সহায়তা ও কৃষি পরামর্শ কার্যক্রম জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন বলেন, এ ধরনের আবহাওয়া বোরো ধানের বীজতলার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই বোরো বীজতলা সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এই আবহাওয়ায় আলুর মোড়ক বা লেট ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এজন্য কৃষকদের নিয়মিত আলুর ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং মোড়ক রোগের সংক্রমণ দেখা গেলে অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

এনএম/ধ্রুবকন্ঠ

বিষয় : কৃষক কুয়াশা কনকনে শীত

আপনার মতামত লিখুন

ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫


কুয়াশা ও কনকনে শীতে স্থবির আক্কেলপুর, দ্বিমুখী চাপে কৃষকরা

প্রকাশের তারিখ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

featured Image

শীত মৌসুম শুরু হতেই জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার দাপটে জনজীবন হয়ে উঠেছে স্থবির। ঘর থেকে বের হওয়াই যেন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা চার দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। চারপাশ ঢেকে থাকছে কুয়াশার সাদা চাদরে। কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের প্রভাবে তাপমাত্রা গতকাল ছিল ১১ দশমিক ৭ আজ ১২ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এই স্যাঁতসেঁতে ও ঠান্ডা আবহাওয়া একদিকে যেমন কিছু শীতকালীন ফসলের জন্য উপকারী হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে অনেক অর্থকরী ফসলে সৃষ্টি করছে মারাত্মক ঝুঁকি। ফলে লাভ ও ক্ষতির এই দ্বিমুখী প্রভাব নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা।

উপজেলার পাশ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা কৃষি আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহজুড়ে উত্তরাঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৯ শতাংশে অবস্থান করছে, যা ফসলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আক্কেলপুর উপজেলায় আলু চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। এছাড়া টমেটো ১০ হেক্টর, সিম ১০ হেক্টর, বেগুন ৪০ হেক্টর, গাজর ১০ হেক্টরসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চাষ ব্যাপকভাবে হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হালকা কুয়াশা ও শীতল আবহাওয়া শীতকালীন সবজি চাষের জন্য তুলনামূলকভাবে অনুকূল। বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মটরশুঁটি, পালং শাক, লাল শাক, মূলা ও গাজরের মতো ফসলে কুয়াশার কারণে জমিতে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকছে। এতে সেচের প্রয়োজন কিছুটা কমছে এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ভালো হচ্ছে। উপজেলার অনেক কৃষক আশা করছেন, চলতি মৌসুমে এসব সবজির ফলন তুলনামূলকভাবে ভালো হতে পারে।

একইভাবে সরিষা ও গম চাষেও সীমিত পরিমাণ কুয়াশা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকায় গাছের বৃদ্ধি ও দানা গঠনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা ভালো ফলনের আশার কথা জানাচ্ছেন কৃষকরা।

তবে কুয়াশা যখন ঘন ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, তখনই দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। অতিরিক্ত কুয়াশা ও দীর্ঘ সময় সূর্যের আলো না পাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়ছে ধানের বীজতলা, আলু, টমেটো, মরিচ, বেগুন ও পেঁয়াজের মতো অর্থকরী ফসল। এসব ফসলে ছত্রাকজনিত রোগ, পাতাপচা, ডাউনি মিলডিউ, ব্লাইট ও লিফ কার্ল রোগের প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জমিতে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যেতে দেখা গেছে। ফল পচে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের আওয়ালগাড়ী গ্রামের কৃষক জলিল মণ্ডল বলেন, সকালে কুয়াশা না কাটলে জমি শুকাতে দেরি হয়। কয়েক দিন ধরে কুয়াশার শিশির রাত-দিন সমানভাবে পড়ছে। জমিতে দীর্ঘ সময় ভেজাভাব থাকায় রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এক জমি থেকে অন্য জমিতে সংক্রমণ ঘটছে। ফসলের পাতায় অতিরিক্ত শিশির থাকার কারণে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও তেমন সুফল মিলছে না। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে আক্কেলপুর পৌরসভার কৃষক  আল রাফি  জানান, এ বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে মাটির ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য বাজার থেকে খাটো–খাটারি প্যারেট ধান ২ কেজির প্যাকেট হিসেবে মোট ৬ কেজি বীজ ৯০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে এবার তার ধানের বীজতলা ঠিকমতো হয়নি। অর্ধেকের বেশি বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।  তিনি বলেন, এই বীজতলা নিয়ে আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে আবহাওয়া থাকলে হয়তো সব বীজতলাই নষ্ট হয়ে যাবে। তখন সঠিক সময়ে ধান লাগানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

কয়েকজন কৃষক জানান, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে ধান ও সবজি-দুই ক্ষেত্রেই লাভের বদলে ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়বে। তারা দ্রুত সরকারি সহায়তা ও কৃষি পরামর্শ কার্যক্রম জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন বলেন, এ ধরনের আবহাওয়া বোরো ধানের বীজতলার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই বোরো বীজতলা সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এই আবহাওয়ায় আলুর মোড়ক বা লেট ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এজন্য কৃষকদের নিয়মিত আলুর ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং মোড়ক রোগের সংক্রমণ দেখা গেলে অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

এনএম/ধ্রুবকন্ঠ


ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho

“তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম”

কপিরাইট © ২০২৫ ধ্রুবকন্ঠ | Dhruba Kantho । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত