জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মন্ডল (৩৫) নামে
এক মাইক্রোবাস চালকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল
সাড়ে ১১টার দিকে কাশিড়া বাজার এলাকায় অবস্থিত ওই কার্যালয় থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত সুজন মন্ডল কাশিড়া
কুমিরপাড়া গ্রামের ওসমান মন্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় মাইক্রোবাসচালক ছিলেন।
নিহতের স্ত্রী মারুফা আকতার
অভিযোগ করে বলেন, টাকা চুরির অভিযোগে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর
স্বামীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে
জানা গেছে, বুধবার বিকেলে ওই ইউনিয়নের পাকুরদাড়িয়া গ্রামে বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের
আয়োজন করা হয়। এ সময় সুজন মন্ডল তাঁর খালাতো বোন কুহেলীর বাড়ি থেকে দরজা ভেঙে প্রায়
৭০ হাজার টাকা চুরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সন্ধ্যার দিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের
সহায়তায় গ্রামবাসীরা তাঁকে ধরে আনেন। সেখানে সুজন টাকা চুরির কথা স্বীকার করেন এবং
তার কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। চুরির বাকী টাকা ফেরত দেবে বলে জানান।
পরে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন
সুজন মন্ডলকে কাশিড়া বাজারে অবস্থিত তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। নিহতের পরিবারের
দাবি, সেখানে আবারও সুজনকে মারধর করা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
এ দিকে ইউপি সদস্য সেলিম
হোসেন থানায় খবর দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন। পুলিশ আর রাতের
বেলায় ঘটনাস্থলে যায়নি। তখন ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন দুই জন গ্রাম পুলিশ দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত
কার্যালয়ে সুজন মন্ডলকে আটকে রাখেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সুজন
মন্ডল তাঁর স্ত্রী মারুফা আকতারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। কিছু সময় পর পাহারায় থাকা
গ্রাম পুলিশেরা জানায়, সুজন আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে
গিয়ে ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় সুজনের মরদেহ ঝুলতে দেখেন।
নিহতের স্ত্রী মারুফা আকতার
বলেন,আমার স্বামী চুরি করলে তার বিচার করার জন্য পুলিশ আছে। ইউপি সদস্য কেন তাঁকে সারা
রাত আটকে রেখে নির্মমভাবে মারধর করলো? আমার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি
সদস্য সেলিম হোসেন বলেন, “পাকুরদাড়িয়া গ্রামের লোকজন তাঁকে মারপিট করেছে। সেখান থেকে
সুজন মন্ডলকে আমার কার্যালয়ে এনে রাত দশটার পর থানায় খবর দিয়েছিলাম। কিন্ত পুলিশ রাতে
ভ্রাম্যমান আদালত হবে না বলে আমাকে জানিয়ে দেন। এরপর দুই জন গ্রাম পুলিশ পাহারায় রেখে
বাড়িতে চলে এসেছি। দুই জন গ্রাম পুলিশ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে সুজন মন্ডল আত্নহত্যা
করেন। সুজন মন্ডলের স্ত্রী মারুফা আকতারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি
সুজন মন্ডলকে মারধর করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন”।
নিহত সুজনের খালাতো বোন
কুহেলী বলেন, আমার খালাতো ভাই বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা চুরি করে। তৎক্ষণাৎ তার কাছ
থেকে ১৪ হাজার টাকা পাই। বাকি টাকা আরেক জনের কাছে রেখেছিলো তার থেকে উদ্ধার করেছি।
পরে সেলিম মেম্বারের কাছে দিয়েছি, সকালে শুনতেছি সে মারা গেছে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, “ইউপি সদস্য তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে একজনকে আটকে
রেখেছে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। আইন অনুযায়ী কোনো ইউপি সদস্য কাউকে আটকে রাখতে পারেন
না।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন রেজা বলেন,ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে
সুজন মন্ডলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ ও শরীরের বিভিন্ন
স্থানে কালশিটে দাগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে মারধরের আলামত রয়েছে।লাশটি উদ্ধার করে
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
.png)
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মন্ডল (৩৫) নামে
এক মাইক্রোবাস চালকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল
সাড়ে ১১টার দিকে কাশিড়া বাজার এলাকায় অবস্থিত ওই কার্যালয় থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত সুজন মন্ডল কাশিড়া
কুমিরপাড়া গ্রামের ওসমান মন্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় মাইক্রোবাসচালক ছিলেন।
নিহতের স্ত্রী মারুফা আকতার
অভিযোগ করে বলেন, টাকা চুরির অভিযোগে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর
স্বামীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে
জানা গেছে, বুধবার বিকেলে ওই ইউনিয়নের পাকুরদাড়িয়া গ্রামে বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের
আয়োজন করা হয়। এ সময় সুজন মন্ডল তাঁর খালাতো বোন কুহেলীর বাড়ি থেকে দরজা ভেঙে প্রায়
৭০ হাজার টাকা চুরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সন্ধ্যার দিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের
সহায়তায় গ্রামবাসীরা তাঁকে ধরে আনেন। সেখানে সুজন টাকা চুরির কথা স্বীকার করেন এবং
তার কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। চুরির বাকী টাকা ফেরত দেবে বলে জানান।
পরে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন
সুজন মন্ডলকে কাশিড়া বাজারে অবস্থিত তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। নিহতের পরিবারের
দাবি, সেখানে আবারও সুজনকে মারধর করা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
এ দিকে ইউপি সদস্য সেলিম
হোসেন থানায় খবর দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন। পুলিশ আর রাতের
বেলায় ঘটনাস্থলে যায়নি। তখন ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন দুই জন গ্রাম পুলিশ দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত
কার্যালয়ে সুজন মন্ডলকে আটকে রাখেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সুজন
মন্ডল তাঁর স্ত্রী মারুফা আকতারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। কিছু সময় পর পাহারায় থাকা
গ্রাম পুলিশেরা জানায়, সুজন আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে
গিয়ে ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় সুজনের মরদেহ ঝুলতে দেখেন।
নিহতের স্ত্রী মারুফা আকতার
বলেন,আমার স্বামী চুরি করলে তার বিচার করার জন্য পুলিশ আছে। ইউপি সদস্য কেন তাঁকে সারা
রাত আটকে রেখে নির্মমভাবে মারধর করলো? আমার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি
সদস্য সেলিম হোসেন বলেন, “পাকুরদাড়িয়া গ্রামের লোকজন তাঁকে মারপিট করেছে। সেখান থেকে
সুজন মন্ডলকে আমার কার্যালয়ে এনে রাত দশটার পর থানায় খবর দিয়েছিলাম। কিন্ত পুলিশ রাতে
ভ্রাম্যমান আদালত হবে না বলে আমাকে জানিয়ে দেন। এরপর দুই জন গ্রাম পুলিশ পাহারায় রেখে
বাড়িতে চলে এসেছি। দুই জন গ্রাম পুলিশ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে সুজন মন্ডল আত্নহত্যা
করেন। সুজন মন্ডলের স্ত্রী মারুফা আকতারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি
সুজন মন্ডলকে মারধর করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন”।
নিহত সুজনের খালাতো বোন
কুহেলী বলেন, আমার খালাতো ভাই বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা চুরি করে। তৎক্ষণাৎ তার কাছ
থেকে ১৪ হাজার টাকা পাই। বাকি টাকা আরেক জনের কাছে রেখেছিলো তার থেকে উদ্ধার করেছি।
পরে সেলিম মেম্বারের কাছে দিয়েছি, সকালে শুনতেছি সে মারা গেছে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, “ইউপি সদস্য তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে একজনকে আটকে
রেখেছে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। আইন অনুযায়ী কোনো ইউপি সদস্য কাউকে আটকে রাখতে পারেন
না।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন রেজা বলেন,ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে
সুজন মন্ডলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ ও শরীরের বিভিন্ন
স্থানে কালশিটে দাগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে মারধরের আলামত রয়েছে।লাশটি উদ্ধার করে
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
.png)
আপনার মতামত লিখুন