সারাদেশ

যমুনা রেল সেতুর শুভ উদ্বোধন: রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত

শরিফুল ইসলাম ,
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে যমুনা রেল সেতুর শুভ উদ্বোধন হয়েছে। ১৮ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশন থেকে উদ্বোধনী ট্রেনটি যাত্রা করে। এর আগে সকাল ১১টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সেতুর উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নবনির্মিত যমুনা রেল সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে রেল যোগাযোগে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

সেতুটি অত্যাধুনিক ইস্পাত প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে, যা আগামী ১০০ বছর স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ডাবল ট্র্যাক ডুয়েলগেজ সেতুটি ৫০টি পিলার এবং ৪৯টি স্প্যানের ওপর স্থাপিত। সেতুটি যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে অবস্থিত।

২০২০ সালে সরকার এই ডেডিকেটেড রেলওয়ে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং একই বছরের ২৯ নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থায়ন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং অবশিষ্ট অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। জাপানের ওটিজি এবং আইএইচআই যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে।

উদ্বোধনী ট্রেনটি পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তে সায়েদাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় এবং পরে পুনরায় পূর্ব ইব্রাহিমাবাদে ফিরে আসে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সেতুর একটি লেন ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরীক্ষার সময় একটি ট্রেন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে সেতুটি অতিক্রম করে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যমুনা রেল সেতু চালুর ফলে ট্রেন চলাচলের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। নতুন সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে। এর ফলে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার রেল যোগাযোগ আরও সহজ ও কার্যকর হবে।

সেতুর ব্যবহারের জন্য যাত্রীদের পন্টেজ চার্জ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ট্রেনের আসনের শ্রেণি অনুযায়ী পন্টেজ চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ৪৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন বলেছেন, “যমুনা রেল সেতু পার হতে এখন আগের তুলনায় কম সময় লাগবে, ফলে সময় ও খরচ উভয়ই সাশ্রয় হবে।”
নতুন সেতুটি দেশের রেল যোগাযোগে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button