চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নামফলক মুছে দেওয়ার নেপথ্যে সাবেক মন্ত্রীর নির্দেশ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জিয়া স্মৃতি জাদুঘর আবারও আলোচনায়। দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ জাদুঘরটি নিয়ে এবার সামনে এসেছে নতুন তথ্য। জানা গেছে, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশেই জাদুঘরের নামফলক মুছে ফেলা হয়েছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা চরমে।
ইতিহাসের স্মৃতি নাকি রাজনৈতিক কৌশল?
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বন্ধের নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের মানববন্ধন থেকে কালো রং দিয়ে মুছে ফেলা হয় জাদুঘরের নামফলক। এর আগের দিন, নওফেল মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে জাদুঘরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জাদুঘরের বেহাল দশা ও পুনর্গঠনের দাবি
১৯১৩ সালে নির্মিত এ ভবনটি প্রথমে সার্কিট হাউজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এখানেই নিহত হন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে এই ভবনকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। এখানে জিয়ার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী ও ঐতিহাসিক ট্রান্সমিটার সংরক্ষিত রয়েছে, যেটি দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল।
বর্তমানে জাদুঘরের অবস্থা বেহাল। দর্শনার্থীদের দাবি, ভবনটির দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বন্ধের পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাজেট রয়েছে, উন্নয়ন নেই!
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য জাদুঘরের বরাদ্দ আড়াই কোটি টাকা হলেও এর বেশিরভাগই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও পেনশনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। বর্তমানে প্রতিদিন তিন শতাধিক দর্শনার্থী জাদুঘরটি পরিদর্শন করেন, জনপ্রতি ২০ টাকা করে ফি নেওয়া হয়। তবে, দর্শনার্থীদের অভিযোগ—সুবিধা কম, অবকাঠামো দুর্বল।
দর্শনার্থীদের আহ্বান: ইতিহাসের স্মৃতি রক্ষা করুন!
জাদুঘরটি পরিদর্শনে আসা নুরজাহান বেগম বলেন, “আমাদের সন্তানেরা যেন সত্য ইতিহাস জানতে পারে, সে জন্য এই জাদুঘর সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।” তবে জাদুঘরের রুটিন দায়িত্বে থাকা অর্পিতা দাশ গুপ্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাজনৈতিক চাপ নাকি ইতিহাসের সুরক্ষা?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button