জাতীয়

কেন্দ্রীয় প্রবাসী কমিটি ঘোষণা করল জাতীয় নাগরিক কমিটি


৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা এবং প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক এহতেশাম হক এক প্রেস ব্রিফিং-এ কেন্দ্রীয় প্রবাসী কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেন।
এই কমিটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যা দেশের সাথে তাদের অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগকে আরও নিবিড় করবে। জুলাই অভ্যুত্থানে অনবদ্য ভূমিকা রাখা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের পক্ষেও কাজ করবে এই কমিটি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১.৫ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে দেশের উন্নয়ন এবং পুনর্গঠনের কাজে যুক্ত করাই এই কমিটির মূল লক্ষ্য।
ডা. তাসনিম জারা বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের একটি ধারণা ছিল যে মেধাবী, শিক্ষিত এবং সৎ মানুষ রাজনীতিতে আসে না। কিন্তু জুলাই বিপ্লব সেই ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে। আজ আমরা দেখছি, পেশাদার এবং দক্ষ ব্যক্তিরা রাজনীতিতে এগিয়ে আসছেন, দেশ পুনর্গঠনে তারা অবদান রাখতে চান। এই কমিটিতে আমরা পেয়েছি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, নিউরোসার্জন, একাডেমিশিয়ান, ডেটা অ্যানালিস্ট, কর্মী, ইমাম এবং ব্যবসায়ী। এদের সবার সঙ্কল্প বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অবদান রাখা। তারা বাংলাদেশের মেধা, সাহস ও শক্তির প্রতিচ্ছবি।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, “অভ্যুত্থানের সময় আমরা যখন শাটডাউন দিয়েছিলাম, তখন “রেমিট্যান্স শাটডাউন” দিয়ে আমাদের সাথে ছিলেন আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা। যখন খুনি হাসিনা আমাদের বিকল্প কে প্রশ্নে আটকে দিয়েছিলো, তখন আমাদের “রিভার্স ব্রেইন ড্রেইন” ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠনের প্রতিজ্ঞা নিয়েছিল আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা, যা আমাদের আন্দোলনে শক্তি যুগিয়েছিল। আমরা চাই, এই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে আমাদের দেড় কোটি প্রবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ডায়াস্পোরা কমিটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ বলেন, “জাতীয় নাগরিক কমিটি দেড় কোটি প্রবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। আগামী নির্বাচনে প্রবাসী ভাইবোনদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আহবান জানাই।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন,“জুলাই বিপ্লবের চালিকা শক্তি ছিল এর মানুষ, এবং এই প্রবাসী কমিটি সেই শক্তিরই একটি সম্প্রসারণ। তারা শুধু প্রবাসে বসে দেশের জন্য চিন্তা করেন না; তারা দেশের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।”
প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক এহতেশাম হক প্রবাসীদের মধ্যে “রিভার্স ব্রেন ড্রেন” নিয়ে একটি আন্দোলন শুরু করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমি ২২ বছর পর আমার মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছি, কারণ আমি বিশ্বাস করি এটি দেশের জন্য কিছু করার সময়। আমি চাই, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি প্রবাসী বাংলাদেশি দেশের জন্য তাদের মূল্যবান জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগান। বাংলাদেশ ২.০ গড়ার পথে এটি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ।”
কেন্দ্রীয় প্রবাসী কমিটি দেশ পুনর্গঠনে যে ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করবে তার মধ্যে রয়েছে আওয়ামীলীগের শাসনামলে লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত আনতে ক্যাম্পেইন করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে দেশের অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে সহজতর করা।

কেন্দ্রীয় প্রবাসী কমিটির সদস্যরা হলেন:
আব্দুর রাকীব সামি, আবু সলমান মুরাদ, আবুল বাশার রহমান, আল আমিন, আলমগীর চৌধুরী আকাশ, আলমগীর হোসেন, এনামুল হক এনাম, দেওয়ান সাহাব-উদদীন, দিলশানা পারুল, ইসরাত জাহান চৌধুরী, ফখরুল ইসলাম, ফারিয়া ফাহি, হাসানুল বান্না, ইমা ইসলাম, ইসলামুল হক, ইশতিয়াক আকিব, কাজী জহিরুল ইসলাম, খালেদ আহমদ, খালেদ রিদওয়ান চৌধুরী, খালিদ ইয়াহইয়া, খন্দকার আলী কাওসার, এম ফয়সাল রিয়াদ, মাহমুদুল হাসান মিলাদ, মাকসুদুল হক, মনজুরুল মাহমুদ ধ্রুব, মারজুক আহমাদ, মোঃ আনিসুর রহমান, মো: আনোয়ার হুসাইন, মো. আরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইশতিয়াক আহমেদ সাগর, যুবাইর সরদার, মোঃ জুবায়েদ, মোঃ মোহাইমিন আল বরাত, মোঃ মনির হোসেন, মোঃ নাফিজ রেজা সজীব, মোঃ রিদওয়ান হোসেন তালুকদার, মো: সাদ্দাম হোসাইন, মো সাকিব হোসেন, মোঃ বাবুল মিয়া, মিম আরাফাত মানব, মেহরাব বখতিয়ার, মীর আবরার হানিফ, মো: আরিফুর রহমান, হামেদ, ইফতেশাম চৌধুরী, মুহাম্মদ শহিদুল আলম, মঈন উদ্দিন হেলালী তৌহিদ, মুনির উদ্দিন আহমেদ, মুনা হাফসা, মুনতাসীর মামুন, নাফিসা রায়হানা, নাহিয়ান বিন খালেদ, নাজমুল বাশার, নাজমুল হোসেন, নজরুল ইসলাম বিপ্লব, নুরুল হুদা জুনেদ, ওমর ফারুক, ওমর আহমেদ ঢালি, পাবেল চৌধুরী, ড. রাশেদুল ইসলাম, সাইফ ইবনে সারওয়ার, সালওয়া শামস, শাহ মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন, শাম্মা জাবীন প্রমা, শারমিন আহমেদ হ্যাপি, সওগাত শারমীন কুতুবী, সৈয়দ মুশফিকুর রহমান, তাজুল ইসলাম শামীম, তারেক আজিজ বাপ্পী, তৌকির আজিজ, তনিমা তাসনিম অনন্যা, উল্লাস জায়েদ, জাফরুল হাসান, জাহিন রাইদাহ মাইশা, জিয়াউল হাশেম
পরিসংখ্যান:
২০২৪ সালে বাংলাদেশ $২৭ বিলিয়ন রেমিট্যান্স পেয়েছে।
দেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ৬%।
প্রবাসী পাঠানোর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ, যেখানে প্রায় ১.৫ কোটি বাংলাদেশি বিদেশে বাস করে।
এ কমিটি গঠনে কাজ করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য মো: ফারহাদ আলম ভুঁইয়া, তাওহিদ তানজিম, আজাহার উদ্দিন অনিক, মনিরা শারমিন, অরণি সেমন্তি খান, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, এস এম সুজা, এহতেশাম হক এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন ডা. তাসনিম জারা ও মোহাম্মদ আতাউল্লাহ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button