জাতীয়

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধিতা করে বয়কটের শিকার ঢাবির ৭৮ শিক্ষক

জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া, নীল দলের মিছিলে অংশ নেওয়াসহ নানা অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষক ক্লাসে থাকলে সেখানে উপস্থিত না থাকারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ৭৮ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বয়কটের তালিকায় রয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে, কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিভিন্ন সেমিস্টারের ক্লাস, পরীক্ষাসহ নানা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এর আগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করে।

এ সময়ও অধিকাংশ শিক্ষককে নীরব থাকতে দেখা যায়। হাতেগোনা অল্প কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেও সেটা ছিল নগণ্য। এ সময় নীল দলের শিক্ষকরা আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন বা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরেই শিক্ষার্থীরা এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে।

আন্দোলনের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া ক্যাম্পাস গত ২২ সেপ্টেম্বর চালু হলেও বিতর্কিত এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরালো করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিভাগগুলোও এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।

আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকেই বিভিন্ন বিভাগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও কিছু বিভাগে চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানানো হয়। অনেক শিক্ষক স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলেও কিছু শিক্ষক স্বেচ্ছায় অব্যাহতি না নিলে শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন।

বয়কটের জেরে আইন বিভাগের চারজন শিক্ষককে বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন, অধ্যাপক রহমতুল্লাহ, অধ্যাপক জামিলা আহমেদ চৌধুরী, প্রভাষক আজহার উদ্দিন ভূঁইয়া, প্রভাষক শাহরিমা তানজিম অর্নি। তাদের ১৩-১৭ ব্যাচের ক্লাস, পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ, খাতা মূল্যায়নসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কলা অনুষদের ১১ বিভাগের অন্তত ২৫ জন শিক্ষককে বয়কট করেছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগে শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছেন ছয় শিক্ষককে। এর মধ্যে ব্যাপক অভিযোগ থাকায় অধ্যাপক ড. ফাজরীন হুদাকে সব ধরনের বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজন শিক্ষককে আন্দোলন চলাকালীন সরকারের পক্ষ নিয়ে নানা প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেটি না করায় তাদের কোনো ক্লাসে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। এই পাঁচ শিক্ষক হলেন, ইনজামাম মাহবুব, সাদিয়া আফরিন, দেবাশিষ দাস, নিলয় রায় ও রহিমা আক্তার।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলীমা আক্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা এবং সহযোগী অধ্যাপক মন্দিরা চৌধুরী। বিভাগের ১৩ থেকে ১৭তম ব্যাচে তারা কোন পরীক্ষা বা ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন না। তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে চলমান পাঁচটি ব্যাচের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই রেবেকা সুলতানার ক্লাস বর্জন করেছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button