ইত্যাদি এবারঐতিহ্য ও সম্ভাবনার প্রাচীন জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ে

নব্বই দশক থেকেই শিকড়ের সন্ধানে ইত্যাদি স্টুডিওর চার দেয়াল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তুলে ধরছে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রত্ননিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঐতিহ্য ও আর্থসামাজিক সম্ভাবনার জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির সামনে। অনুষ্ঠান ধারণ উপলক্ষে বর্ণিল আলোয় রাজবাড়ি যেন নতুন সাজে সেজেছিল। কেউ কেউ মন্তব্য করেন প্রায় ১০০ বছর পর রাজবাড়ি যেন তার হারানো যৌবন ও অতীত ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে।
ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে পুরো ঠাকুরগাঁও জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা, ছিল নাগরদোলাও। রাণীশংকৈলে ধারণ হলেও দর্শকরা আসেন ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড় এবং দিনাজপুর থেকেও। বিকাল তিনটা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত হন তাদের ভালোবাসার অনুষ্ঠান দেখার জন্য। ফলে দুই কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দর্শকরা তাদের প্রিয় ইত্যাদি ও এর প্রাণপুরুষ হানিফ সংকেতকে দেখার জন্য বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন। ফলে অনুষ্ঠান ধারণের সুবিধার্থে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করা হয়, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় কিছুক্ষণ পরেই আবার ধারণ শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, ইতোপূর্বে ঠাকুরগাঁওয়ে কখনও কোন অনুষ্ঠানে এত দর্শক সমাগম হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ লোক বেশি হওয়ার কারণে স্থানাভাবে অনেক দর্শকই আশেপাশের বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ, রাস্তা, দেয়াল ও গাছের উপর উঠে তীব্র শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় ধরে অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেছেন তাঁদের প্রিয় অনুষ্ঠানের ধারণ। কিছুক্ষণ পরপরই চলছিলো হাজার হাজার দর্শকের উচ্ছ্বাসপূর্ণ চিৎকার আর তালি বৃষ্টি। উল্লেখ্য দর্শকপ্রিয় ইত্যাদি এ বছর পা রেখেছে তার ৩৭তম বছরে।
এবারের ইত্যাদিতে রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের সন্তান একসময়ের ঠাকুরগাঁওয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাণপুরুষ, বর্তমানে রাজনীতিবিদ জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার জীবনের অনেক অজানা কথা।
এবারের অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেছেন দুই প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী ও লিজা। গানটির কথা লিখেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাশ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের শুরুতেই রয়েছে ঠাকুরগাঁওকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন রোহিত খান তুহিন, কণ্ঠ দিয়েছেন তানজিনা রুমা, রাজীব, অয়ন চাকলাদার ও সানজিদা রিমি। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী।
শেকড়ের সন্ধানে ইত্যাদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক ও শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতেও রয়েছে কিছু মানবিক, সচেতনতা, তথ্যভিত্তিক ও শিক্ষামূলক প্রতিবেদন।
ঠাকুরগাঁওয়ের মঞ্চে এবার নাতিকে দেখা গেলেও দেখা যায়নি নানিকে। সাথিহারা নাতি কি করেছে এবারের ইত্যাদিতে, দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে অনুষ্ঠান প্রচারের দিন পর্যন্ত।
এছাড়াও ইত্যাদির নিয়মিত আয়োজন চিঠিপত্র বিভাগ, বিদেশি প্রতিবেদন পর্ব, দর্শক পর্বসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসঙ্গতি ও সমাজ সংস্কারের উপর রয়েছে বেশ কিছু তীক্ষ্ণ ও তীর্যক নাট্যাংশ।
গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর।
ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।
-অ্যাডমিন।