কক্সবাজারের পর্যটন: মহাপরিকল্পনার অভাবে অপার সম্ভাবনার অপচয়
কক্সবাজারের পর্যটন: মহাপরিকল্পনার অভাবে অপার সম্ভাবনার অপচয়
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, যার অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারে যেকোনো পর্যটক। সমুদ্রের গর্জন, ঢেউয়ের মাতাল করা শব্দ এবং সূর্যাস্তের রূপ কেবল দেশীয় পর্যটকদেরই নয়, বিদেশিদেরও আকর্ষণ করার মতো। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে কক্সবাজার আজও হয়ে উঠতে পারেনি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র।
পর্যটন বিকাশে নেই মহাপরিকল্পনা
কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার হলেও কার্যত পর্যটন সুবিধা সীমাবদ্ধ মাত্র চার কিলোমিটারে। বাকি সৈকত এবং এর আশপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য প্রায় অদেখা থেকে যাচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নেই উপযুক্ত বিনোদনব্যবস্থা, যেমন থিম পার্ক, সিনেপ্লেক্স, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, নাইটক্লাব, ক্রুজ শিপ, কিংবা ইকো রিসোর্ট।
সেন্ট মার্টিন থেকে মহেশখালী: সম্ভাবনার দ্বীপপুঞ্জ
সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচু করে থাকা সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপও পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে না। সেন্ট মার্টিনে কিছু পর্যটক যাওয়া শুরু করলেও মহেশখালী ও সোনাদিয়া প্রায় অচেনা রয়ে গেছে। এই দ্বীপগুলোতে পরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠলে তারা বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পেতে পারে।
পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধার ঘাটতি
পর্যটকদের নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং বিনোদন সেবায় ঘাটতি রয়েছে। মাত্র কয়েকটি বিচ পয়েন্টে (কলাতলী, সুগন্ধা, লাবনী) কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। অপরিকল্পিত বিচ ব্যবস্থাপনা এবং ভাসমান দোকানপাট সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।
পরিকল্পনার অভাব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা
পর্যটন খাতে বিনিয়োগে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম। ১৬-১৮টি সরকারি দপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকল্প শুরু করা কঠিন। বিনিয়োগ বাড়াতে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ চালু এবং মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই উল্লেখ করছেন।
পরিবেশ দূষণ: একটি বড় চ্যালেঞ্জ
কক্সবাজার শহরের অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশ দূষণ করছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
উন্নয়নের আশা: মহাপরিকল্পনা আসছে?
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ২০২২ সালে সমীক্ষার জন্য ১৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে মহাপরিকল্পনার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে কক্সবাজারের ভবিষ্যৎ।
উপসংহার
পরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যটনের তীর্থস্থান বানাতে পারে। একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগই পারে এই সম্ভাবনাময় শহরের বিকাশ ঘটাতে।