যানজট নিরসন ও বায়ুদূষণ রোধে জনসাধারণ ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চাই-মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. যানজট নিরসন ও বায়ুদূষণ রোধে জনসাধারণ ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত “সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ” বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভপতির বক্তব্যে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ মন্তব্য করেন।
১৯৭১’এ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী শহীদ, সম্ভ্রমহারা মা-বোন ও জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্দোলনে আহতদের আরোগ্য কামনা করে সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কার, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং অসহনীয় যানজট ও বায়ুদূষণ রোধে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় তিনি সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী নির্বিশেষে সকলের এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধান মেনে চলার আহ্বান জানান।
ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবার আহ্বান জানিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যত্রতত্র পার্কিং, সুনির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী উঠানামা না করা, পুরনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন ঢাকা শহরে যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। এরই প্রেক্ষিতে শ্রম উপদেষ্টা স্বল্পকালীন সমাধান হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ে বা পিক আওয়ার গুলোতে একমুখী যানচলাচলের ব্যবস্থা করা, পার্কিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্কতার সঙ্গে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলেন। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে উপদেষ্টা ঢাকা শহরের বাস টার্মিনালগুলো এবং রেলওয়ে স্টেশন স্থানান্তরের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ফিটনেসবিহীন, রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী লক্কড়ঝক্কড় গাড়ী, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী বাসগুলো মালিকদের নিজ দায়িত্বে অপসারণ করার আহ্বান জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বায়ু দূষণে ঢাকা শহরের মানুষ ভুগছে এবং এ সমস্যা সমাধানে আমাদের অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও ঢাকা শহরের দূষণ রোধে সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত করতে এবং ঢাকাবাসীকে একটি সুন্দর ও নিরাপদ শহর উপহার দিতে আমাদের সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এসময় তিনি সড়কে যানজট নিরসনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারগণকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বকশ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ঢাকা শহরের যানজট মুক্ত করতে ড্রাইভারদেরকে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে বিশদভাবে অবহিত করতে হবে, প্রয়োজনে বিদেশি প্রশিক্ষক এনে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বর্তমানে পরিচালিত ট্রিপ বেইজড ব্যবস্থার সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসময় তিনি মহাসড়কে অটো রিক্সা নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।
জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। শিমুল বিশ্বাস আরো বলেন, সরকারকে চালকদের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন পুর্নবিবেচনা করতে হবে। এসময় তিনি সরকারের গৃহীত সকল জনবান্ধব উদ্যোগকে সমর্থন জানাবেন বলে অঙ্গীকার করেন এবং সড়কে বেআইনি চাঁদাবাজি বন্ধে সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।
সভার সভাপতি ও সড়ক উপদেষ্টা তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সেবায় উন্নতি করতে না পারলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানসহ সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি যানজটের স্থানসমূহ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন এবং ড্রাইভার ও গাড়ির মালিকদের হয়রানি বন্ধে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।
সড়ক উপদেষ্টা আরো বলেন, যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী উঠানামা বন্ধে সুনির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করা এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীর স্কুল গুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল বাসের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিশ বছরের পুরনো ও ফিটনেসবিহীন বাসগুলো মে মাসের মধ্যে রাস্তা থেকে তুলে নিতে হবে এবং এ সংক্রান্ত কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণের সহায়তার প্রয়োজন হলে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস দেন তিনি।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়ে সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে কষ্ট দেওয়া নয়; ঢাকা শহরের যানজট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সবশেষে সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এর সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ, বাস মালিক সমিতির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিবৃন্দ, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপিস্থিত ছিলেন।