নারী ও শিশু

জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর কাজের মূল্যায়ন জরুরি

নারী পুরুষ পারষ্পারিক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে সমাজে সহিংসতার অবসান হতে পারে। আজকের কন্যা আগামী দিনের নারী। নারী ও কন্যার উন্নয়নকে বাদ দিয়ে একটি জাতির সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী উন্নয়ন কেবলমাত্র নারীদের জীবনমানের উন্নতি নয়। অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন নারী উন্নয়নের মুলমন্ত্র। প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন”। দিবসটির গুরুত্ব বিবেচনা করে আজ ৯ মার্চ ২০২৫ সকাল ১১.০০ টায় কৈবর্ত সভাকক্ষে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সর্বক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য দূর করে নারীর প্রতি সম্মান, সমানাধিকার ও সহিংসতা রোধে বার্তা জানাতেই এই আয়োজন করা হয়।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতেই নারী দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের প্রধান সৈয়দা অনন্যা রাহমান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান শাহ ইসরাত আজমেরী ।

সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমতা ও ক্ষমতায়নে মর্যাদা ও অর্থনৈতিক মুক্তি জরুরি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর কৃতিত্ব, সম্মান ও মর্যাদা প্রাধান্য দিয়েছে। সমাজে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার পাশাপাশি বৈষম্য কমাতে নারী পুরুষ সকলের এগিয়ে আসতে হবে। সমাজে প্রাতিষ্ঠিানিক, নৈতিক এবং মানবিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

শাহ ইসরাত আজমেরী বলেন, কোন একটি বিশেষ দিনকে উপলক্ষ্য করে নয়, নারাীর অধিকার রক্ষায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্টীয়ভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর গৃহস্থালীর কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা হলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে ও সমাজে সহিংসতা কমে আসবে। পাশাপাশি পারিবারিকভাবেই গৃহস্থালী কাজে পুরুষের সহযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করতে হবে।

গাউস পিয়ারী বলেন, বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক ও স্থানীয়ভাবে নারী নেতৃত্বে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে  শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে নারী দেখিয়েছে অসাধারণ সাফল্য। নারী তার অসাধারন সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। নারীদের এই সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সমাজে এখনও জেন্ডার বৈষম্য এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান। কর্মক্ষেত্রে রয়েছে হয়রানি এবং নিরাপত্তার অভাব, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবারিক দায়িত্বে রয়েছে অসম বন্টন।

উপস্থিত বক্তারা আরো বলেন, শ্রদ্ধাপূর্ণ, সহিংসতামুক্ত পরিবার ও সাম্যের সমাজ গঠনের আমাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা দরকার। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার এখনও অর্জিত হয় নাই। এই বিষয়ে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নারীদের আত্মরক্ষামূলক শিক্ষা, মানসিক সুস্থতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নারী উদ্যেক্তা তৈরিতে অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেয়া জরুরি ।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, লরেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ,শেরে-বাংলা আইডিয়াল স্কুল,ইমপেরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কনফিডেন্স মেমোরিয়াল হাই স্কুল, গ্রীন ভয়েস, কেরানিগঞ্জ ইউম্যান রিসার্চ ডেভলপমেন্ট সোসাইটি, চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশন, বনোশিক্ষা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইংসহ ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রতিনিধিবৃন্দ ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একই প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা শানজিদা আক্তার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button