অন্যান্য

ডোমখালী সি বিচ মিরসরাইয়েরসম্ভাবনাময় পর্যটন স্পষ্ট


মিরসরাই উপজেলার ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ডোমখালী সি-বিচ একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট। পশ্চিমে বিস্তীর্ণ সাগরের জলরাশি, পূর্বে দুই কিলোমিটার জুড়ে ম্যানগ্রোভ বন উত্তরে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল আর দক্ষিণে সীতাকুন্ডের বিস্তৃত সমুদ্রতট আর মাঝে নতুন জেগে উঠা বালুচরে নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত ডোমখালী সমুদ্র সৈকত।

মূলত ডোমখালী খালের মোহনায় বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা নতুন বালুচরের ডোমখালী সি বিচের সৃষ্টি। জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে মিরসরাইয়ের উপকূলজুড়ে তৈরি করা বাঁধ কাম মেরিন ড্রাইভ সড়ক এ স্থানটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। এখানে রয়েছে একটি স্লুইসগেট যেখান থেকে জেলেরা মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয়।

ডোমখালী সি বিচের সৌন্দর্য সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী কিংবা কাট্টলির আনন্দবাজার সি বিচ থেকে কোন অংশেই কম নয়। জেগে বালুচরে নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে কেওড়া বন। আর সবুজ ঘাসের গালিছা জোয়ার ভাটায় প্লাবিত হয়ে নতুন সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। জোয়ারের সময় মনে হয় সমুদ্রের ঢেউ কেবল হাতছানি দিয়ে ডাকছে আর ভাটার সময় বিস্তীর্ণ চর দৃশ্যমান হলে মনে হয় ক্রমাগত নতুন ভূমি যোগ হচ্ছে মিরসরাইয়ের মানচিত্রে।

ডোমখালী সি বিচের সৌন্দর্য কেবল সি বিচ কেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ নয়। ডোমখালী সি বিচের প্রধান প্রবেশ পথ বগাচতর থেকে শুরু করে পশ্চিমে সি বিচ পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার সড়কের দুপাশে ম্যানগ্রোভ বন। পিছঢালা কালো রাস্তার দুপাশে সবুজের হাতছানি আর মাঝে মাঝে শোনা যায় শিয়ালের ডাক। একসময় এ বনে প্রচুর হরিণ ছিলো, কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পায়নের প্রভাবে হরিণগুলো হারিয়ে গেছে। এখনো সীতাকুন্ড অংশে মাঝে মাঝে হরিণ দেখা যায়।

আবার ডোমখালী সি বিচ থেকে এখন সহজেই মিরসরাই ইকোনমিক জোনে যাওয়া যায়।পশ্চিমে সাগরের জলরাশি আর পূর্বে সবুজ বন দেখতে দেখতে পর্যটকরা পৌঁছে যেতে পারেন দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলে৷ জেলেদের মাছ ধরা আর নৈমিত্তিক জীবনের সংগ্রাম, চর জুড়ে মহিষের পালের উরি খাওয়ার দৃশ্য, জোয়ার ভাটার প্লাবন আর গোধূলিবেলায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই।

ডোমখালী সি বিচ কেবল একটি পর্যটন স্পটই নয়, ডোমখালী খালের মোহনা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্র। মিরসরাইয়ে বেশির ভাগ ইলিশই আসে এখান থেকে৷ এখানে সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি পাওয়া যায় কাঁকড়া, চেউয়্যা, চিরিং, ডাগুর, গুল্লা সহ হরেক পদের মাছ। একটা সময় এখান থেকে সন্দ্বীপে মানুষ পারাপার হতো, সন্দ্বীপের দূরত্ব একেবারেই কম।

যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে এখানে ছুটির দিনগুলোতে অনেকেই ঘুরতে আসে। কিন্তু এখানে এখনো কোন শৌচাগার নেই, নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নাস্তা করার জন্য ভালো কোন দোকানও গড়ে উঠেনি।

যেভাবে যেতে হবে- ডোমখালী সি বিচে যাওয়ার অনেকগুলো রুট রয়েছে। বড় দারোগারহাট থেকে কমর আলী বাজার পাড়ি দিয়ে ভূইয়ার হাট বাজার থেকে একটু পশ্চিমে আসলেই মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে এখানে পৌঁছানো যায়। আবার নিজামপুর কলেজ থেকে পশ্চিমে গজারিয়া বেড়িবাঁধ হয়ে সোজা দক্ষিণে গেলে ডোমখালী সি বিচের প্রধান ফটক। আবার নিজামপুর কলেজ থেকে সাহেরখালী বাজারের আগে বিষু মিয়া সড়ক ধরে সমিতির বাজার এসে ভূঁইয়ারহাট হয়ে ডোমখালী সি বিচ যাওয়া যায়। আবার বড় তাকিয়া থেকে সিপির মোড় এসে পুরাতান বেড়িবাঁধ হয়ে সোজা দক্ষিণে গেলে ডোমখালীর শেষ প্রান্তে সি বিচের প্রবেশপথ পাওয়া যায়। আবার মিরসরাই ইকোনমিক জোনের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে দক্ষিণে গেলে এ রোডের শেষ প্রান্তে ডোমখালী সি বিচে যাওয়া যায়।

ছবি: সংগৃহিত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button