৩৬জুলাইয়ের স্মৃতি

“আমার রিকশা রক্ত আর মগজে ভরা ছিল। আমার পরিবাররে জিগান, এগুলা ও’ই পরিষ্কার করছে…”
‘সার্কিট হাউজের মুখে রিকশা রাইখা আমি আর বুলু মহিপাল মোড়ে গেলাম। আবু সাইদের গায়েবানা নামাজ হইছিল৷ এরপর শুরু হইলো টুসটুস টুসটুস টুসটুস!
পিছায়ে সার্কিট হাউসের মোড়ে যতক্ষণে গেছি, আমার পাশেই তিনটা শুই গেছে! গুলি মাথার এক পাশ দি ঢুকি আরেক পাশ দি বাইর হই গেছে। লগে মগজ!
আমার গুলিডা খাইছে আমার বরাবর সামনের জন। খায়া লগে লগেই সে কাইত! আল্লাহ আমারে বাঁচাই দিছে! আরেকটা গুলি আমার লুঙ্গি ফুটা কইরা চইলা গেছে।
দুইডা পোলা আইছে, একডা টোকাই হইব, আরেকডা হেলমেট পরা। সামনেই তিনডা লাশ পইড়া আছে, একজন ইট নিয়া মারলো লাশের মাথায়! কত বড় জানোয়ার! এইয়া দু:খজনক ঘডনা বাবা, মানুষগুলা ত মরিই গেছে!
আমি এক পান দোকানের কোণায় লুকায়া ছিলাম, নাইলে এইডা কেউ দেখত না, সবাই ত পলায়া গেছে! ছবি উডাইবার মত মন মানসিকতা আমার আছিল না, নইলে আমি আমনেগোরা দেখাইতাম!
পরে আমি দুইডারে উঠাইলাম রিকশায়, আরেক রিকশারে কইলাম আরেকডা উঠাইতে। রিকশার চাবি হারায়া ফেলছিলাম, চাবি আরেকডা আনতে আনতে রিকশা আমি টানিই লই গেছিলাম। পাচগইচ্ছার মুখে লাশগুলারে এক এম্বুলেন্সে তুলি দিলাম। বুলু গুলি খাইছিল, আবার গেলাম তারে হসপিটালে নিয়া যাইতে।
হসপিটালের কি অবস্থা যে আছিল! কান্নার একটা বন্যা বই গেছেগোই, আর রক্ত! আমার মাথা ঠিক আছিল না আর!
আমগোরে যারা এমনে গুলি তাক করছে, আমি শুধু তাগো বিচার দেখতে চাই। আর কিছুই না।’