ধর্ম

মাইজভাণ্ডারী একাডেমির যুগপূর্তি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন


বাংলাদেশে প্রবর্তিত একমাত্র ত্বরিকা, ‘ত্বরিকা-এ মাইজভাণ্ডারীয়া’র প্রবর্তক হযরত গাউসুল আযম শাহ সুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র ১১৯তম উরস শরিফ মহান ১০ মাঘ উপলক্ষে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট-এর ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাইজভাণ্ডারী একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ‘যুগপূর্তি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এবার সম্মিলনের প্রতিপাদ্য বিষয়: ‘সহিষ্ণুতা, বিচার সাম্য ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় বিধি-বিধান’। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সম্মিলনের আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত ব্যক্তব্য রাখেন এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট-এর সচিব অধ্যাপক এ ওয়াই এমডি জাফর।
অনুষ্ঠানে ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (মা.জি.আ) ভিডিওবার্তার মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেন। সম্মিলনে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী শক্তিনাথানন্দজী মহারাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (ইউ এস টি সি) এর প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, চট্টগ্রাম কথলিক আর্চডাইয়োসিসের ডিরেক্টর (প্রোগ্রামস্ এ- অপারেশনস্) মানিক উইলভার ডি কস্তা এবং সাতগাছিয়া দরবার শরিফের সাজ্জাদানশীন মাওলানা সৈয়দ আবুল ফজ্বল মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ সুলতানপুরী। এইচ আর মেহবুব জিকো ও আবু সালেহ সুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মাওলানা মুজিবুল হক পবিত্র কুরআন থেকে, বিপ্লব পার্থ গীতা থেকে, অধ্যক্ষ ভদন্ত এম বোধি মিত্র ভিক্ষু ত্রিপিটক থেকে, পাস্টর অজয় অধিকারী বাইবলে থেকে পাঠ করেন এবং মোঃ রেজাউল মুনির হামদ, নাত ও সৈয়দ জাবের সরওয়ার মাইজভাণ্ডারী কালাম পরিবেশন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ‘যুগপূর্তি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন ২০২৫’ এর উপদেষ্টা এস এ মোহাম্মদ আলী, সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, এমরোজ গোমেজ, দিলীপ বড়ুয়া, ডা.বরুণ কুমার আচার্য্য বলাই, বিপ্লব পার্থ, অ্যাড. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইকবাল, শরফুদ্দিন রাসেল, শ্যামল নন্দী, মাওলানা মুজিবুল হক, মজিবুল হক প্রমুখ।
সম্মিলনে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মবেত্তা ও চিন্তকগণ বলেন, মানবজাতির বিশ্বাসের অনন্য কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ধর্ম। মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধর্মের অবস্থান হচ্ছে হৃদস্পন্দনের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ধর্ম পালনে অভ্যস্ত-অনভ্যস্ত সকলের হৃদয়ে স্ব স্ব ধর্ম ও অনুগামীদের প্রতি থাকে এক ধরনের আত্মিক অনুকম্পা। কোন কোন সময় এই স্তরের অনুকম্পা বিবেকতাড়িত ন্যায়বোধকে অস্বীকার করে জাত্যাভিমান জাগ্রত করার মাধ্যমে হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়। এ ধরনের মানসিক অবস্থায় সৃষ্টি হয় পারস্পরিক অনাস্থা-অবিশ্বাস-সন্দেহ-সংশয়। বিস্তার ঘটে নানা কিসিমের সাম্প্রদায়িকতার। সাম্প্রদায়িকতার তীব্র বিরোধী ইসলাম ধর্মের মৌলিক গ্রন্থ কুরআন এক ধর্মের উপর অন্য ধর্মের আধিপত্য প্রয়াস এবং বাড়াবাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একইভাবে সকল ধর্মে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং শান্তির কথা বলা আছে। স্রষ্টার নিকট সমর্পণের নিয়ম-রীতি এবং অনুশীলন পদ্ধতির নাম ধর্মাচার। ধর্মাচারে ভিন্নতা আছে, কিন্তু কেন্দ্রবিন্দু এক এবং অভিন্ন। একক স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে মানব ঐক্যের লক্ষ্যে বিশ্বজনীন পয়গাম অনুরণনের অংশ এই সম্মিলন। বর্তমান সংঘাতপ্রবণ পৃথিবীতে শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সহাবস্থান নিশ্চিতকরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button