চট্টগ্রাম

কর্তৃপক্ষের ‘ইশারা’ পেলে মামলা করবেন ‘ওসি’ নেজাম

চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন সংস্থাটির সদস্যরা। ছেলের সামনে এভাবে মারধর-লাঞ্ছনা ভালোভাবে নেয়নি নেটিজেনরাও। এদিকে, মারধরে নেতৃত্ব দেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা শহীদুল ইসলাম শহীদকে বহিষ্কারও করেছে দলটি। অন্যদিকে, পাঁচলাইশ থানার সাবেক ওসি নেজাম বলছেন, ‘কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন—মামলা করবেন কিনা।’
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিনের শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা এবং চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারার ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর মনে গভীর সমবেদনা তৈরি হয়েছে। একজন পুলিশ অফিসারকে এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত ও মারধর করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় এবং ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য। এক বিজ্ঞপ্তিতে, নেজাম উদ্দীনকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় সংগঠনটি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মারধরের পর পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দীনকে নেওয়া হয় দামপাড়া পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে গতকালই (সোমবার) চলে গিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে কোথায় রয়েছেন—তা জানাতে ‘বারণ’ রয়েছে।
নগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, ‘সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিন গতকাল পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে গেছেন। আর উনি যেহেতু চট্টগ্রামে কর্মরত নন, সেহেতু সিএমপি মারধর সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এটি তিনি যেখানে কর্মরত রয়েছেন সেখানকার ঊর্ধ্বতনরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন কথা বলতে রাজি হন। তিনি মুঠোফোনে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কথা বলতে পারছি না আসলে। খুব কষ্ট হচ্ছে।’
আইনি পদক্ষেপ নেবেন কিনা—প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি আলাপ করবো। এখন তো কথাই বলতে পারছি না।’
পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষোভ
কোতোয়ালী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদা থেকে অধস্তনদের নিয়ে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। এ ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে সংগঠনটির সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক ডাবলু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ৬ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন স্থানীয় একটি স্কুল থেকে তার সন্তানকে আনতে যান। ওই সময় পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সামনে চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম শহীদসহ স্থানীয় কিছু বিক্ষুব্ধ জনতা প্রকাশ্যে ফেসবুক লাইভে গিয়ে তার সন্তানের সামনে তাকে মারধর করেন। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে ভাইরাল হয়।
এটি দণ্ডনীয় এবং ফৌজদারী অপরাধ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নেজাম উদ্দিনের শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা এবং চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মনে গভীর সমবেদনা তৈরি হয়েছে। একজন পুলিশ অফিসারকে এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত ও মারধর করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় এবং ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য ।
নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সকল নাগরিককে আহ্বান জানাচ্ছি, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে যেকোনো অসন্তোষ বা অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনানুগ পদ্ধতি অনুসরণ করুন। এ ধরনের ঘটনা সরকারি কর্মচারিদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা নষ্ট করে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি ।
বিবৃতিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করবে। যাতে বাংলাদেশ পুলিশ আরও কার্যকর ও জনবান্ধব হয়ে উঠতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
দলের জন্য আবেগের তাড়নায় কাজ করতে গিয়ে ‘বলি’ হলেন শহীদ!
এদিকে, সাবেক ওসি নেজাম উদ্দীনকে পেটানো সেই নেতাকে বহিস্কার করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। বহিস্কৃত শহীদুল ইসলাম শহীদ চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ছিলেন। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক এম. আবু বক্কর রাজুর পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিস্কারের কথা জানানো হয়।
এদিকে বহিস্কারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শহীদুল ইসলাম শহীদ। তাঁকে বলি দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল যে ঘটনা হয়েছে তা ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পালিত প্রশাসনের গুন্ডার সাথে। যে আমার দলের নেতাকর্মীর রক্ত ঝরিয়েছে রাজপথে, ১৫ বছর ভালো মতো একরাত ঘুমাতে দেয় নাই। আজ দলের জন্য আবেগের তাড়নায় কাজ করতে গিয়ে আমাকে বলি দেয়া হল। আমি এই বলি দেয়াকে স্বাগত জানাই এবং আমার রক্তের সাথে মিশে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) একজন কর্মী হিসেবে সারা জীবন থাকতে চাই।’
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছেন তাঁর অনুসারীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button