রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে রিজভী:আপনারা ন্যায়-নীতির পরোয়া করেন না, রাজনীতির নামে ধান্ধাবাজি করেন

রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চেনে জনগণ। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয়তাবাদী রিকশা-ভ্যান-অটো শ্রমিক দলের পক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে যারা ব্যাংক লুট করেছে, ব্যাংক আত্মসাৎ করেছে, এস আলমদের উত্তরসূরি হিসেবে ৫ আগস্টের পর আমরা দেখেছি- ইসলামী ব্যাংক কীভাবে গ্রাস করে নিল একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা। ৫ আগস্টের পরেরদিনই ইসলামী ব্যাংকগুলো কী করে দখল করে নিল, এটি জনগণ দেখেছে।’
জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পাড়া-মহল্লায়, জেলায় জেলায় অনেক টার্মিনাল দখল, সিএনজি স্ট্যান্ড দখল, টেন্ডার ভাগাভাগির মধ্যে আপনাদের লোকরা কি জড়িত নেই? আমি সেই রাজনৈতিক দলটিকে বলতে চাই, নীরবে-নিভৃতে সব অপকর্মের সঙ্গে আপনারা জড়িত। শেখ হাসিনার ব্যাংক আত্মসাতের পর, ৫ আগস্টের পর আপনাদের আত্মসাৎও জনগণ দেখেছে।’
‘আমরা হাসিনার আমলে দেখেছি চাপাতি লিগ, হেলমেট লিগ, বন্দুক লিগ, ক্ষুর লিগ; আবার জনগণ তো এটিও জানে- ক্ষুর পার্টি এবং পায়ের রগ কাটা পার্টি। কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চেনে জনগণ।’
দলটির উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনাদের একাত্তরের অর্জন কী? আপনারা একাত্তরের বিরোধিতা করেছেন।’
‘জিয়ারউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই গৌরব- একাত্তরের গৌরব, নব্বইয়ের গৌরব বিএনপির। কারণ সেদিনও আপনারা শেখ হাসিনার সঙ্গে আতাত করে এরশাদের নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এটিও জনগণ দেখেছে। তবে ৮৬’র নির্বাচনে বিএনপি যায়নি। কারণ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, স্বৈরাচারের অধীনে কোনো নির্বাচন করব না।’
তিনি বলেন, ‘মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন, যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে ও ভয়ঙ্কর শেখ হাসিনার স্বৈরাচার কায়েমের জন্য এসেছিল, সেদিনও আপনারা নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছিলেন। এটিও জনগণ জানে এবং দেখেছে।’
‘আপনারা তো ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানে কি বারবার মুনাফেকি করা? ইসলামের মর্মবাণী হচ্ছে, তুমি যে অঙ্গীকার কর, তা রক্ষা করবে। বিএনপি সেই ঐতিহ্যের পতাকা ধারণ করে, যার মধ্যে আছে, জনগণের কাছ থেকে বিন্দুমাত্র পশ্চাদপসরণ না করা। ৭১ থেকে (২০২৪ সালের) ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনও মাথা নিচু করেনি বিএনপি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চান, শেখ হাসিনার প্রতিটি গুম-খুনের দোসর হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত।… এরপরও আপনারা বলেন, শেখ হাসিনার সব মাফ করে দেবেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন। এর মধ্যে দিয়েই তো প্রমাণিত হয় যে আপনারা ন্যায়-নীতির পরোয়া করেন না, রাজনীতির নামে ধান্ধাবাজি করেন।’
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচারের প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনার দলের প্রধান নেতাদের যারা জুডিশিয়াল প্রক্রিয়ার নামে জুডিশিয়াল কিলিং করল, তাদের আপনার মাফ করে দেবেন বলছেন। তাহলে ইসলামের যে মর্মবাণী- অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কর, সেটি তো আপনাদের মধ্যে নাই।… অর্থাৎ আপনারা আপনাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন।’
‘পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেই শুধু অপতথ্য, অপপ্রচার ও (বিএনপির ওপর) কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা হচ্ছে না, ভেতর থেকেও অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাচ্ছে।’
নতুন বছরে বিএনপির প্রত্যাশা কী- সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘যার জন্য ১৫-১৬ বছরের সংগ্রাম, আগামী বছর সেই গণতন্ত্র ফিরে আসবে; এদেশের ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, তারা দেশের প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে আসবে- এটিই বিএনপির প্রত্যাশা।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button