জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮৭২০ শিক্ষকদের ‘জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেল সংক্রান্ত বিধির বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অবৈধ প্রজ্ঞাপন’ বাতিলের দাবির সাথে একাত্ম প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২৪ এর ছাত্র জনতার অভ্যূত্থান এ সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহত যোদ্ধাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের সংবাদ সম্মেলন শুরু করছি। আমরা জানি, একটা সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত জাতি গঠনে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে শিক্ষা। তবে বাংলাদেশের ৫৩ বছরের বাস্তবতায় শিক্ষাকে অবমূল্যায়ণ করা হয়েছে। শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ, যা পেশা হিসাবে কখনোই যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি, এরমধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ অংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আরো বেশি অবহেলিত। আজ ২০১৩ সালে জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮,৭২০ শিক্ষকদের ‘জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেল সংক্রান্ত বিধির বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১২/০৮/২০২০ তারিখের অবৈধ প্রজ্ঞাপন’ বাতিলের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আমাদের সাথে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছে ‘প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সহ ৬৪ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ :
আপনারা জানেন, আমাদের দেশে বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য এলাকার জনসাধারণের উদ্যোগে সারা দেশে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এসব বিদ্যালয়গুলোতে সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পাঠ দান চলার এক পর্যায়ে ২৪ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করার পর গত ৯ই জানুয়ারী ২০১৩ সালে ছাব্বিশ হাজার একশত তিরানব্বইটি (২৬,১৯৩) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এক লক্ষ চার হাজার শিক্ষককে জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণ ঘোষণার পর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকুরী শর্তাবলী নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ গেজেট এর বিধিমালার ২(গ)এ ৩১/১২/২০১২ পর্যন্ত বেসরকারি চাকুরীর দৈর্ঘ্যতার ৫০% কার্যকর চাকুরীকাল হিসেবে গণনা করে গেজেটের ৯ এর উপবিধি ৩ এ কার্যকর চাকুরীকালের ভিত্তিতে টাইমস্কেল প্রাপ্তির বিধি বিধান বাস্তবায়নের ফলে জাতীয়করণকৃত শিক্ষকগণ সে অনুযায়ী সুযোগ সুবিধার অংশীজন হন। যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২১/০১/২০১৪ ইং তারিখে ১৩ নং স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২১/০১/২০১৪ ইং তারিখে ৬৪৫ নং স্মারক জারি করলে সেই আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ০৫/০৬/২০১৪ ইং তারিখে ৮৮৯ নং একটি পরিপত্র জারি করেন। যাতে টাইমস্কেল প্রদানের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনায় ৫০% কার্যকর চাকুরীকাল হিসেবে ৮, ১২ এবং ১৫ বছর পুর্তিতে টাইমস্কেল প্রাপ্য হলে; জেলা প্রাথমিক শিক্ষাঅফিস কর্তৃক টাইমস্কেল মঞ্জুরী করলে; হিসাব রক্ষণ অফিস তা বিধি সম্মত মেনে নিয়ে ৪৮,৭২০ জন শিক্ষকের টাইমস্কেলসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা :
সরকারি বিধি বিধানের আলোকে ৪৮৭২০ জন শিক্ষক টাইমস্কেল ভোগ করার পর হঠাৎ ৮ বছর পর বিগত ১২/০৮/২০২০ ইং তারিখে ৯২ নং স্মারকে অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক টাইমস্কেল প্রাপ্য হবে না মর্মে একটি পত্র জারি করেন।
যাহা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২১/০১/২০১৪ইং তারিখের ০৭০০.০০০০.৬১.৩৮.০০৭-১৩-১৩নং স্মারকে নির্ধারিত বেতনস্কেল অনুযায়ী প্রচলিত বিধি-বিধান গ্রহণপূর্বক ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২১/০১/২০১৪ ইং তারিখের ৬৪৫ নং স্মারক এবং ০৫/০৬/২০১৪ইং তারিখে ৮৮৯ নং পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। যাতে টাইমস্কেল প্রদানের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছিল। উল্লেখ্য যে, জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ জারির পূর্ব পর্যন্ত ০৮.১২.১৫ বৎসর পূর্তিতে টাইমস্কেল প্রদানের বিষয়টি প্রচলিত ছিল।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১২/০৮/২০২০ ইং চিঠি দেওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারি নিয়মানুযায়ী অবসরে যাওয়া শিক্ষকগণ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছিলেন। অনেক শিক্ষক সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে মৃত্যুবরণও করেছেন। দুঃখজনক হলে সত্য যে বর্তমানে যারা পিআরএল, পেনশনে যাচ্ছেন তারা উক্ত পত্রের কারণে অমানবিক হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। আবার অনেকে ন্যায্য পাওনা না পেয়ে অসুস্থতায় ভুগছেন এবং কেউ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন যা সম্পূর্ণ অমানবিক ও বেআইনি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা: জাতীয় নাগরিক কমিটি শিক্ষকদের অবর্ণনীয় কষ্ট লাঘবে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জরুরী ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আপনাদের মাধ্যমে আমাদের নিম্নবর্ণিত দাবী বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
০১। অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত ১২/০৮/২০২০ তারিখে ৯২ নং স্মারকে অবৈধ পত্রটি বাতিল করতে হবে।
০২। উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা যেন কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ: আপনারা জানেন, বৈষম্যের শিকার জাতীয়করণকৃত শিক্ষকগণ ৭ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন, শিক্ষকদের অমানবিক কষ্টের কথা বিগত স্বৈরাচার সরকারের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব কেউই কোন প্রকার গুরুত্ব দেননি। অবশেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিগত সরকার বিতাড়িত হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা মহোদয়সহ সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার সদয় দৃষ্টি কামনা করা হয়। কিন্তু আজ অবধি এবিষয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষকগণ মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ হন। এবিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছে, একইসাথে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ধন্যবাদান্তে, (শিক্ষক সমাজের পক্ষে)
ফয়সাল মাহমুদ শান্ত
কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি