রাষ্ট্রীয় সম্মানে কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যামের শেষ বিদায়
রাষ্ট্রীয় সম্মানে চিরবিদায় নিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজেয় শ্যাম। শুক্রবার সকালে সুজেয় শ্যামের মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। যেখানে একাত্তরের সহযোদ্ধা, সহশিল্পী আর স্বজনরা শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন।
এরপর ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই গীতিকার ও সুরকারের কফিন মুড়িয়ে দেয়া হয় জাতীয় পতাকায়। পুলিশের একটি দল সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেন। এসময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরিবারের মানুষ ছাড়াও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শন শেষে সুজেয় শ্যামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমন্দিরে। বিকেল পাঁচটার পর সেখানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, সুরকার-সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
সংগীতে অবদানের জন্যে তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীত পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তিনি প্রায় চার মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’ উল্লেখযোগ্য।
সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা বাগানের মালিক। তার শৈশব কেটেছে সিলেটের চা বাগানে। দশ ভাইবোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ।