সিএমপি’র ডিবি (বন্দর-পশ্চিম) ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানাধীন কলসীদিগী পাড়ায় অবস্থিত পেলাগাজীর বাড়ি, আলী সওদাগরের বিল্ডিং-এর নিচতলার একটি তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে গত ২৬ মার্চ ২০২৫, সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় এক অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় সিএমপি’র গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বন্দর-পশ্চিম টিম ছায়া তদন্ত শুরু করে। বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়াদের সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় এবং পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়াগণ নিহতের সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে না পারায়, তদন্তপ্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে।
তদন্তের এক পর্যায়ে ডিবি টিম জানতে পারে নিহত ব্যক্তি একজন গার্মেন্টস কর্মী হলেও তার কর্মস্থলের সুনির্দিষ্ট তথ্য অজানা ছিল। তবে ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানের ক্যাশ মেমো থেকে প্রাপ্ত একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তদন্তের গতিপথ পরিষ্কার হতে শুরু করে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিবি টিম ঢাকার পোস্তগোলা ব্রিজের উপর থেকে বাগেরহাটগামী রয়েল পরিবহনের বাসের যাত্রী সন্দেহভাজন আসামি ইব্রাহিম হাওলাদার (২৪) কে আটক করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ইব্রাহিম হাওলাদার স্বীকার করে যে, সে নিহত টুম্পা আক্তার (২২) কে হত্যার সাথে জড়িত। আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নিহতের বিস্তারিত পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
নিহতের পরিচয়: নাম: টুম্পা আক্তার (২২) পিতা: লিয়াকত আলী মাতা: মৃত মনোয়ারা বেগম ঠিকানা: কালামুরিয়া, বেপারী বাড়ি, পোস্ট-কুটি, থানা – কসবা, জেলা – ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বর্তমান ঠিকানা: কলসীদিঘী রোড, ওয়াসিম চৌধুরী পাড়া, পেলাগাজীর বাড়ি, আলী সওদাগরের বিল্ডিং-এর নিচতলার ৩ নম্বর কক্ষ, থানা – বন্দর, জেলা – চট্টগ্রাম।
নিহতের পূর্বের সংসারে চার বছর বয়সী এক পুত্রসন্তান (মাহিম) রয়েছে। তিনি গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামের সিইপিজেড-এ অবস্থিত প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন এবং কলসীদিঘী এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
তদন্তে জানা যায়, নিহত টুম্পা আক্তার ও আসামি ইব্রাহিম হাওলাদার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে ছিলেন এবং একই বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করতেন। তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। এই বিরোধের জেরে ২৬ মার্চ ২০২৫, রাত আনুমানিক ১২:৩০ টায়, আসামি ইব্রাহিম পরিকল্পিতভাবে টুম্পাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে বাসার দরজায় তালা ঝুলিয়ে, নিহতের শিশুপুত্রকে পাশের একটি বাসার সামনে রেখে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় সিএমপি’র বন্দর থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ: ১. ঘটনাস্থল থেকে কোনো আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। ২. নিহতের কর্মস্থল ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৩. আসামির মোবাইল কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ৪. স্থানীয় বাসিন্দাদের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে তদন্ত আরও দৃঢ় করা হচ্ছে।
সিএমপি’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।