শিক্ষা

এমপিও শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেওয়া নিয়ে সংকট কোথায়?

এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীকে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির মাধ্যমে সরকার বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও জটিলতা যেন কাটছেই না। এজন্য উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রস্তুতির অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। ডাটাবেজ তৈরিতে অপর্যাপ্ত বা ভুল তথ্যের কারণে এমন ভোগান্তি বলে জানিয়েছেন তারা। এমনকি ডাটাবেজে ভেলিডিটেশন বা ভুল সংশোধন প্রক্রিয়ার ধীরগতিকেও দুষছেন অনেকে। তবে, মাদ্রাসা ও কারিগরির এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ধাপে ধাপে ইএফটি কার্যকর করা হবে।
প্রথম ধাপে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর মাসের বেতন পেলেও এখনও পাননি অনেকে। এরই মধ্যে তারা জানুয়ারির বেতনও প্রাপ্য হয়েছেন। অনলাইনে ডাটা সংশোধন না হলে বাকি শিক্ষক-কর্মচারীরা ফেব্রুয়ারিতেও ডিসেম্বর মাসের বেতন পাবেন না।
অন্যদিকে, গত জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়া শুরু করা যায়নি এখনও। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়া শুরু হবে।
বেসরকারি শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, স্কুল-কলেজের তিন লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে কিছু শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ তাদের ডাটায় ভুল সংশোধন করতে ফেব্রুয়ারি মাস পার হয়ে যাবে। সে কারণে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর মাসের বেতন এ মাসেও পাবেন না।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কলেজ-২) মো. নওসের আলী বলেন, জানুয়ারির বেতন শিগগিরই হয়ে যাবে। ডিসেম্বরের বেতন অলরেডি সব প্রায় সবাই পেয়ে গেছেন।
সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইলে তিনি এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ (ইএমআইএস) সেলে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান জানান, সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক কর্মচারীর বেতন দেওয়া হয়েছে ইএফটির মাধ্যমে। বাকি শিক্ষক-কর্মচারীদের ডাটা ভেলিডিটেশন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এটি শেষ হলে দিতে পারবো দুই সপ্তাহের মধ্যে। তবে যাদের ডাটা ভুল আছে তাদের দিতে সমস্যা হতে পারে।’
জানুয়ারি মাসের বেতন কবে নাগাদ দেওয়া শুরু হবে জানতে চাইলে খন্দকার আজিজুর রহমান জানান, জানুয়ারির বেতন সামনের সপ্তাহে দেওয়া শুরু করতে পারবো। জানুয়ারিরটা দ্রুত হয়ে যাবে, কারণ ডিসেম্বরটা যাদের ক্লিয়ার করতে পেরেছি, সেগুলো দিতে সমস্যা হবে না।’
২০২১ সালে ইএফটিতে বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩১ ডিসেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, ‘জানুয়ারিতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হবে ইএফটির মাধ্যমে।’
পরে ইএফটিতে বেতন দিতে বছরের প্রথম দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং অধিদফতরের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও’র অর্থ, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা অনলাইনে ইএফটি পদ্ধতিতে পাঠানো উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। ধাপে ধাপে বেতন দেওয়া শুরু হয়। তবে এখনও ডিসেম্বরের বেতন দেওয়াই শেষ করা সম্ভব হয়নি।
উদ্বোধনের আগে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডাটা প্রস্তুত না করেই জানুয়ারিতে বেতন দেওয়ার কাজ শুরু করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষা অধিদফতর জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সব ডাটা ঠিক না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। কিছু ভুল থাকার পরও এবার ইএফটিতে অনেকের বেতন ছাড়া হয়েছে। তবে যাদের ভুল বেশি তাদেরটা সংশোধন করা হচ্ছে। যাদের ডিসেম্বর মাসের বেতন জানুয়ারিতে দেওয়া হয়েছে তাদের জানুয়ারি মাসের বেতন ফেব্রুয়ারিতে দিতে সমস্যা হবে না।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে ইএফটিতে বেতন দেওয়া শুরু করায় সমস্যা হয়েছে। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ডাটা ঠিক করে তারপর বেতন দেওয়া হলে সমস্যা হতো না। শিক্ষক-কর্মচারীদের জানুয়ারি শেষে বেতন নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।
এদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর আট বিভাগের আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডিসেম্বরের বেতন পরীক্ষামূলক ফেব্রুয়ারিতে ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হবে। জানুয়ারিতে পাইলটিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আর এপ্রিলে ইএফটিতে সব শিক্ষকের বেতন দেওয়া শুরু করার কথা থাকলেও তা করা হবে ধাপে ধাপে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন জানান, সব প্রস্তুত না করে ইএফটিতে বেতন দেওয়া হবে না। ফেব্রুয়ারিতে আট বিভাগের আটটি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার পাইলটিং করা হবে। পাইলটিংয়ের পর পর্যায়ক্রমে ইএফটিতে বেতন দেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button