জীবনধারা

সেন্টমার্টিনে ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটক যাওয়া বন্ধ

ফেব্রুয়ারী থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন যাত্রা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফেব্রুয়ারী মাস থেকে পর্যটক যাতায়াত নিষিদ্ধ থাকবে সেন্টমার্টিনে।
একারণে জানুয়ারির ৩১ তারিখ থেকে সেন্টমার্টিনগামী সকল পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মাস (ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর) সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এতে ভরা মৌসুমে বিধিনিষেধ জারি করায় হতাশ দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক ও কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক যাতায়াত করতে পারবে সেন্টমার্টিনে। একারণে আগামী ৩১ তারিখ থেকে সকল পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে।
এর আগে গেল বছরের ১ ডিসেম্বর নানা জটিলতার মধ্যে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে একটি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে পর্যটক যাতায়াত শুরু হয় এবছর। এখন ৬ টি জাহাজ আসা-যাওয়া করছে এ কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে।
তবে দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর দাবি জানালেও আজ (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটক যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু এ বছর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটক সীমিতকরণসহ নানা বিধি-নিষেধ জারি হয়। যেখানে নভেম্বর মাসে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন কিন্তু রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবে ও রাত্রিযাপন করতে পারবেন আর ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে, আগামী ৩১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে চলতি পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিন যাত্রা; যার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।
দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘দুই মাসের আয় দিয়ে সেন্টমার্টিনবাসীর বাকি ১০ মাস চলা সম্ভব নয়। এ জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপ উন্মুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এমএ রহিম জিহাদী বলেন, ‘অতীতে এ রকম কোনো সংকট দ্বীপে তৈরি হয়নি। এখন যদি দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে নানামুখী সংকটে পড়বেন বাসিন্দারা। দ্বীপে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ। তাই মানবিক বিবেচনায় পর্যটকদের জন্য আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করার দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।’
সি-ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসটা পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ করছি। এতে দ্বীপের মানুষের এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতিটা অনেকাংশে পুষিয়ে নিতে সহজ হবে।
তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া ভ্রমণ সময় বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচল করতে পারবে। এরপর আর পর্যটকবাহী জাহাজগুলো চলাচল করতে দেয়া হবে না। যদি সরকার বর্ধিতকরণের কোনো নির্দেশনা প্রদান করে, সেক্ষেত্রে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। বাকি ছয় মাস সাগর উত্তাল থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সেসময় ছিলে না কোন বিধিনিষেধও। সম্প্রতি নাফ নদে ডুবোচর জেগে ওঠার কারণে নাব্য সংকটে ও মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button