চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বেলার গণশুনানির আয়োজন


‘আমরা বংশপরম্পরায় পাথরঘাটা ইকবাল রোডে চাক্তাই খালের পাশে মনোহরখালী মাছবাজারে ব্যবসা করে আসছিলাম। আমার ভাই একটা বরফকল চালাতেন সেখানে। এই আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলত। কিন্তু ২০১৭ সালে পুরোনো বাজারটি বন্ধ করে দিয়ে কর্ণফুলী দখল করে নির্মাণ করা হয় একটি নতুন মাছবাজার। সেখানে আমাদের দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা; কিন্তু দেওয়া হয়নি। দোকান না পেয়ে আমার ভাই স্ট্রোক করে মারা যান। এখন আমরা চলতে পারি না। নদী দখলমুক্ত করে নতুন বাজার বন্ধ করা হোক। পুরোনো বাজার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’ শিল্পদূষণ থেকে নদী রক্ষায় করণীয় শীর্ষক গণশুনানিতে অংশ নিয়ে মনোহরখালীর পান্না দাস এই আকুতি জানান।
গতকাল ২৭ জানুয়ারি সোমবার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রামের নদীগুলোর দখল ও দূষণ রোধে এই গণশুনানির আয়োজন করে। শুনানি পরিচালনা করেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া।
অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক ও বেলার কর্মসূচি প্রধান ফিরোজুল ইসলাম।

মূল প্রবন্ধে মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, কর্ণফুলী নদীর মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নদী রক্ষায় কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় না। তারা ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে দায়িত্ব শেষ করে। নদীটি শিল্পদূষণের শিকার। নদীর সঙ্গে সংযুক্ত কারখানাগুলোর ৯০ শতাংশের বর্জ্য শোধনাগার নেই। নগরের দুই হাজার টন বর্জ্য গিয়ে পড়ে নদীটিতে। শুনানিতে হালদা নদী, কর্ণফুলী নদী, সাঙ্গু নদী ও মাতামুহুরী নদীপারের নারী-পুরুষ অংশ নেন।

হালদাপাড়ের বাসিন্দা মুজিবুল হক বলেন, হালদার সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন খালে স্লুইসগেট (জলকপাট) দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই স্লুইসগেট কোনো কাজে আসছে না। এগুলো তুলে দিলে নদী এবং এলাকার খালগুলো বাঁচবে। তিনি আরও বলেন, ‘হালদা নদীকে ন্যাশনাল হ্যারিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নদীটি আমরা কিছুটা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছি। তবে এই নদীর উজানে এখনো তামাক চাষ হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের খাল ও নদী রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, কর্ণফুলী দখল করে ফিশারিঘাটে নতুন মাছবাজার হয়েছে। পুরোনো বাজার উচ্ছেদ করে সেখানকার বাসিন্দাদের রুটি–রুজি কেড়ে নেওয়া হয়। নতুন বাজারটি বন্ধ করতে আদালতের আদেশ রয়েছে। এটা উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করতে হবে।

বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, ‘নদী মরে যাচ্ছে। এ কারণে আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রাকৃতিক কারণে এবং নিজেদের কারণে নদী ধ্বংস হচ্ছে। যতক্ষণ নদীকে বাঁচাতে না পারব, তত দিন জলাবদ্ধতা কমবে না। সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজেদেরও নদী রক্ষায় সচেতন হতে হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button