জাতীয়

নতুন পুলিশ সংস্কার: গ্রেপ্তার ও তল্লাশির সময় পুলিশকে পরিচয় দিতে হবে

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে পুলিশের কার্যক্রমে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এবার সামনে আসছে বড় পরিবর্তন। পুলিশের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে, যার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত পুলিশের সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ও তল্লাশির সময় পুলিশের সদস্যদের অবশ্যই পরিচয় প্রদান করতে হবে। এর আগে প্রায়ই পুলিশের পরিচয় না দিয়ে গ্রেপ্তার বা তল্লাশি চালানোর অভিযোগ ওঠে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করেছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি কোনো পুলিশ সদস্য পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন বা তল্লাশির জন্য যথাযথ ওয়ারেন্ট না থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জরুরি কল সার্ভিস ব্যবহার করে পুলিশ সদস্যদের সত্যতা যাচাই করার সুযোগ পাবেন।
পুলিশ সংস্কার কমিশন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, অভিযানের সময় পুলিশ সদস্যদের প্রত্যেককে একটি বিশেষ ভেস্ট-পোশাক পরতে হবে, যাতে থাকবে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম এবং ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইস। বিশেষত, রাতের বেলা গৃহে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এই ব্যবস্থা আইনের শাসন নিশ্চিত করবে এবং অপব্যবহার রোধ করবে।
এছাড়া, পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ওভার টাইম’ মজুরি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল জানান, পুলিশের কাজের চাপ অনেক বেশি, ফলে যদি অতিরিক্ত কাজের জন্য ‘ওভার টাইম’ মজুরি প্রদান করা হয়, তবে তারা আরও মনোযোগী হবে এবং পুলিশের দুর্নীতি কমে আসবে।
এছাড়া, কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তা পুলিশের অপব্যবহার সম্পর্কিত অনেকগুলো বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে। কমিশন বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে, অজ্ঞাতনামা আসামি সনাক্ত না করেই গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং আদালতের আদেশ ছাড়া এফআইআরবহির্ভূত কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এটি অপচর্চা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, কারণ এর মাধ্যমে অনেকে হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করে।
মানবাধিকার রক্ষায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রধান কার্যালয়ে মানবাধিকার সেল কার্যকর করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এই সমস্ত সুপারিশ পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button