জাতীয়

টিউলিপের পতনের ঘণ্টা বেজেছিল আগেই, নেপথ্যে একটি ছবি

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে যুক্তরাজ্যে বিপাকে পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা এবং তদন্তের মুখে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) মন্ত্রিত্ব ছাড়েন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পর শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে টিউলিপের নাম ব্যাপকভাকে আলোচিত হলেও তার যোগসাজশ ছিল বেশ পুরোনো। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পুরোটা সময় সহযোগিতা এবং অর্থ আত্মসাতে তার সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে একটি ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে।
ছবিটি ১২ বছর আগের। যেখানে বাংলাদেশের শেখ পরিবারের সঙ্গে টিউলিপের ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে। অথচ, পরিবারের সঙ্গে তার রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই বরং সম্পর্ক কেবলই আত্মীয়ের বলে বহুবার দাবি করে আসছেন টিউলিপ।
দ্য গার্ডিয়ান ওই ছবিটি জুড়ে দিয়ে এক বিশ্লেষণে জানায়, ২০১৩ সালে তোলা ছবিটি ২০১৫ সালে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর পর টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে তখন থেকেই সতর্কীকরণ অবস্থা ছিল। ওই ছবিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী তার খালা শেখ হাসিনা, খালাতো ভাই সজীব ওয়াজেদ জয় ও টিউলিপকে দেখা যায়। খালার পাশে টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন বেশ হাস্যোজ্জ্বল। ছবি প্রকাশিত হলে তখনই লেবার পার্টির ভেতরে আশঙ্কার ঘণ্টা বেজে ওঠে।
২০১৫ সালের সেই সময় টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নের আসনের জন্য লেবার প্রার্থী ছিলেন। এটিকে কেন্দ্র করেই ছবিটি তখন নতুন করে প্রচার পায়। কিন্তু তিনি ক্রেমলিনে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি নিয়ে দলের নেতাদের উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, আমি আমার খালার প্রতিনিধি দলের অংশ ছিলাম না। আমি গিয়েছিলাম কারণ আমার সঙ্গে তার খুব একটা দেখা হয় না। বৈঠকে পুতিন বললেন, ‘‘তোমার পরিবার কি এখানে? আমি একটা ছবি চাই।’’ অতীতের দিকে তাকালে, আমার ভাবা উচিত ছিল যে এটি কেমন দেখাচ্ছে। আমার মনে হয় পুতিন ভাববেন, ‘‘এই এলোমেলো মেয়েটি কে; যার সাথে আমি অস্ত্রের চুক্তি করতে যাচ্ছি?’’
কিন্তু এত বছর পর সেই ছবিটিই শেখ হাসিনার অর্থ আত্মসাতে টিউলিপের সহযোগিতার দৃশ্যত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাতের মধ্যস্থতায় টিউলিপ
আওয়ামী লীগ সরকার ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট নেওয়া, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে সহযোগিতা, অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্থা করানো বা পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতি ছাপিয়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল- রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাতের মধ্যস্থতা করা।
এ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮ আগস্ট গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়। যাতে মধ্যস্ততা করেন ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button