জাতীয়

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু ২০ জানুয়ারি

আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২৫ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ সুপারদের সমন্বয়ে সাতটি কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি।
ইসি জানিয়েছে, নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ ও সুপারভাইজারের মাধ্যমে যাচাই কার্যক্রম আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। দুই সপ্তাহ পর্যন্ত অথবা শুরুর তারিখের পরবর্তী দুই সপ্তাহ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা তার আগে যাদের জন্ম তাদের ও বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তাদেরকে ভোটার তালিকাভুক্তি এবং মৃত ভোটারদেরকে তালিকা থেকে কর্তনের জন্য তথ্যাদি সংগ্রহ করা হবে।
কীভাবে হবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম
আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ এবং মৃত ভোটারদেরকে তালিকা থেকে কর্তনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করবেন। এরপর আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধন কেন্দ্রে নিবন্ধন (বায়োমেট্রিক গ্রহণসহ) কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যাদের জন্ম অথবা বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তাদেরকে তালিকায় যুক্ত করা হবে।
উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারদের নাম কর্তনের তথ্যাদি এবং নতুন ভোটারের তথ্য বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্ট্রেশন সফটওয়্যারের (বিভিআরএস) সাহায্যে এন্ট্রি ও ডাটা আপলোড করতে হবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
এ ছাড়া, আগামী ৫ মে তারিখের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে খসড়া ভোটার তালিকার পিডিএফ প্রস্তুত এবং সিএমএস (কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) পোর্টালে লিংক সরবরাহ করতে হবে বলে জানিয়েছে ইসি।
বর্তমানে এনআইডি ছাড়া দেশের কোনো নাগরিকই সরকারি-বেসরকারি সেবা পান না। একই সঙ্গে এনআইডিতে তথ্য ভুল থাকলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু নির্ভুল এনআইডি করে এসব ভোগান্তি থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
যেসব নাগরিকেরা নতুন করে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন, তারা অবশ্যই ফরম-২ শিক্ষা সনদ, জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে মিল রেখে পূরণ করবেন। তাহলে সঠিক ও নির্ভুল এনআইডি পাওয়া সম্ভব।
ভোটার হতে কী কী লাগবে
২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তারা এবার ভোটার হতে পারবেন।
নিবন্ধনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পূরণ করা ফরম-২ এর সঙ্গে অনলাইন জন্মসনদ অথবা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা পাশের সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এ ছাড়া, অন্যান্য কাগজপত্র যেমন- নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র বা বাড়ি ভাড়া বা হোল্ডিং ট্যাক্স বা যে কোনো ইউটিলিটি বিল পরিশোধের রসিদের কপি জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
নাগরিকদের এনআইডি সেবায় নতুন উদ্যোগ ইসির
নিবন্ধন কেন্দ্রেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শনপূর্বক ভোটার হিসেবে নিবন্ধন হতে পারবেন। ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ এর সঙ্গে জন্মসনদ বা অন্যান্য কাগজাদি সংযুক্ত করে দিতে হবে। ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ এর ধারা ৩ (ক) এ নামে সংজ্ঞায় শিক্ষা সনদের পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর অধীন নিবন্ধিত নামকে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা যেভাবে ভোটার হবেন
সরকার বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেওয়ায় তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজসেবা অফিসের প্রত্যয়নপত্র অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নের ভিত্তিতে নিবন্ধিত হতে হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্তদের যা যা করতে হবে
তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম কর্তন
তালিকাভুক্ত ভোটারদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন অথচ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন তাদের নাম ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২-এর ২৬(৬) মোতাবেক কর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তথ্য সংগ্রহকারীদের।
ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত মৃত ভোটারের নাম কর্তনের লক্ষ্যে ফরম-১২ পূরণপূর্বক সংগ্রহ করবেন তথ্য সংগ্রহকারী ব্যক্তি। ফরম-১২ এর সঙ্গে অবশ্যই ‘মৃত্যু সনদ’ বা ডাক্তারের সনদ বা চেয়ারম্যান/মেয়র/কাউন্সিলের প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রার থেকে মৃত ভোটার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
তবে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে জীবিত ভোটারের নাম যেন লিপিবদ্ধ না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটারযোগ্য নারীদের রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ করে নারী জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছে ইসি। সংস্থাটি বলছে, জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নারী জনপ্রতিনিধিদের কমিটিতে দায়িত্ব পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। বিশেষ করে তারা প্রচারের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও সহযোগিতা দিতে পারেন।
নিবন্ধন কার্যক্রম কীভাবে
নিবন্ধন কেন্দ্রে ডাটা এন্ট্রির পর তথ্যাদি মুদ্রণ করে আবেদনকারীর স্বাক্ষর গ্রহণ এবং স্বাক্ষরিত প্রিন্ট কপিটি নিবন্ধন ফরম ও অন্যান্য ডকুমেন্টসহ স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ডাটার সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখবেন দায়িত্বরত ব্যক্তিরা।
এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট ভোটারের আইরিশ এবং ১০ আঙ্গুলের ছাপের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করতে হবে।
সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান ইসির
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ।
তিনি বলেন, আমরা শুধু ২০২৫ সালের তথ্য সংগ্রহ করব না। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের তথ্যও সংগ্রহ করব। তাদের আমরা ২০২৬ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করব। তবে তারা চলতি বছরের কোনো নির্বাচনে ভোটার হিসেবে গণ্য হবেন না।
তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গেলে তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
নিবন্ধন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার, সিনিয়র জেলা বা জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যক্রমে সমন্বয় থাকতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এই কমিটিগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদকে সভাপতি করা হয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি। এই কমিটির দায়িত্বে থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি।
না’ ভোটের পক্ষে ইসি কর্মকর্তারা
এ ছাড়া আঞ্চলিক সমন্বয় কমিটির দায়িত্বে থাকবেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা কমিটির দায়িত্বে থাকবেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, উপজেলা সমন্বয় কমিটির দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিটি করপোরেশন কমিটির দায়িত্বে থাকবেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার সমন্বয় কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার।
সমন্বয় কমিটি যেসব দায়িত্ব পালন করবে—
১. ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে রেজিস্ট্রেশন অফিসারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা।
২. প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে সহযোগিতা দেওয়া।
৩. ভোটার রেজিস্ট্রেশনের জন্য বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীদের মধ্যে নিবন্ধন ফরম পূরণ এবং রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে এসে ছবি তুলতে বা এ সংক্রান্ত কার্যক্রম নিতে কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক তা সুরাহা করা।
৪. যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সঠিক আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা।
৫. যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অপারেটররা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কি না, তা পরিবীক্ষণ করা।
৬. হালনাগাদকরণ কার্যক্রমে দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে সমন্বয় ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা।
৭. তথ্য সংগ্রহকারী ও অন্যান্য জনবল নিয়োগ এবং তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা।
৮. দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা শিক্ষক বিশেষ করে তথ্য সংগ্রহ ও সুপারভাইজিং কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সার্বক্ষণিকভাবে এ সংক্রান্ত কাজে ন্যস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ করা।
ভোট শুরুর অপেক্ষা
৯. ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা কোনো ওয়ার্ড ও ভোটার এলাকার সীমানা নির্দিষ্ট করতে কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিধিবিধান অনুযায়ী সমাধান করা।
১০. হালনাগাদ কার্যক্রম উপলক্ষ্যে নেওয়া প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়া।
১১. হালনাগাদ কার্যক্রমে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা, গণসচেতনতা সৃষ্টি ও প্রচার কাজে মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়কে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা করা।
১২. হালনাগাদ কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করা।
১৩. যাচাই কার্যক্রম সঠিকভাবে প্রতিপালনের লক্ষ্যে ইউনিয়ন বা পৌরসভায় তত্ত্বাবধান টিম গঠন করা।
১৪. হালনাগাদ কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতি মূল্যায়ন করা এবং মূল্যায়ন প্রতিবেদন সময়ে-সময়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অবহিত করা।
১৫. নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সময়ে-সময়ে দেওয়া এ সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা।
১৬. সমন্বয় কমিটি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হবে এবং সমন্বয় কমিটির নেওয়া কার্যক্রম প্রতিবেদন আকারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে পাঠাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button