শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অসাংবিধানিক ও বেআইনি তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সর্বশেষ তারা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে প্রত্যর্পণ অর্থাৎ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ভারত সরকারকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই খুনি-অসভ্য জঙ্গিগোষ্ঠী বর্তমানে বিচারহীনতা, অরাজকতা এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও পৈশাচিকতায় পরিপূর্ণ বাংলাদেশে নিতে চায়।
ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে শত শত মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়েছে। যাদের বাদী দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই মামলার বিষয়ে অবগত নয়। যে সকল ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে মামলা করা হয়েছে, তাদের অনেকেই জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছে। এ সকল মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার ব্যতীত এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পূর্ব গৃহীত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আবার, একই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ এবং সরকারের বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দেওয়া হলো। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী একই বিষয়ে দুইবার এই ধরনের মামলা হতে পারেনা।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করা হয়েছে মূলত ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী এবং গণহত্যাকারীদের বিচারের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। কারণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই এই বিচার সম্পন্ন হয়েছিল। তারা বিচারের নামে ম্যাটিক্যুলাস ডিজাইনের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে যে, তারা শেখ হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক যে, স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১৩ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অথচ আজ সেই অপরাধীদের পক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে হত্যার উদ্দেশ্যে এই প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়। একটি জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও কলঙ্কজনক ঘটনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রত্যর্পণের অনুরোধ দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত এক্সট্রাডিশন ট্রিটি’র আলোকে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। কারণ রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা ও অসত্য মামলার বিষয়গুলো এই চুক্তির আওতায় পড়ে না। তাছাড়া, ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা থাকলে এই চুক্তি প্রযোজ্য হয় না। আজ সারা পৃথিবী জানে, বাংলাদেশে আইনের শাসন বা ন্যায়বিচার নেই।
এই অপশক্তি জুলাই- আগস্ট এবং পরবর্তীতে দেশে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে। এরা সারাদেশে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী- সমর্থক, পুলিশ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই হত্যাকান্ড গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে। এখনও তারা সারাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এদের হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও অত্যাচার একাত্তরকেও হার মানিয়েছে। এদের কেউ প্রতিরোধ করছে না, কেউ বিচার করছে না। অবিলম্বে এদের গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। এদের বিচার না করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে হত্যা করে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে নির্মূলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিরোধী এই অপশক্তি দেশকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতে চায়। এই অশুভ শক্তি দেশ ধ্বংসের প্রতিটি কাজই করে যাচ্ছে। দেশ রক্ষার জন্য আজ দেশের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানবতা ও দেশবিরোধী অপশক্তিকে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এই যুদ্ধে আমরা জয় ব্যতীত অন্য কোনো বিকল্প নয়।