১৩২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন
১৩২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিল চসিক
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান: মেয়র ডা. শাহাদাত
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ১৩২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সোমবার সকালে নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউটে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট, সম্মাননা ও সম্মানির টাকা তুলে দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমাদের বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ একটি স্বপ্ন নিয়ে হয়েছিল—সমতা, মানবিক মর্যাদা, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। সেই চেতনা ধারণ করে সেদিন এদেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু গত ৫৩ বছরে বারবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে খণ্ডিত করা হয়েছে এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখে আনতে ব্যর্থ হয়েছে জাতি। ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধের বিপ্লব উদ্যানকে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। নতুন প্রজন্ম জানে না, সেদিন ২৫শে মার্চের কালো রাতে কী হয়েছিল। সেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কীভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—এমন অনেক প্রশ্ন এখনো ইতিহাসের পাতা থেকে পরিষ্কার হয়নি।
“আজকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানাই, প্রকৃত শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হোক। কতজন বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, এবং বীরপ্রতীক রয়েছেন তা জানাতে হবে। একইসঙ্গে সেক্টর কমান্ডার এবং সাব-সেক্টর কমান্ডারদের সঠিক নাম ইতিহাসে সংরক্ষণ করতে হবে। গত ১৬ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিভিন্নভাবে বিকৃত করা হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্সি দাবি করে এসেছে, তাদের আসল অবদান কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন অনেকেই আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন, অথচ আজ নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেন। এই মিথ্যা দাবির বিরুদ্ধে সত্যিকারের ইতিহাস সামনে আনতে হবে। আমরা নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে চাই। সেক্টর কমান্ডার কারা ছিলেন, কোথায় যুদ্ধ হয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠদের আত্মত্যাগ—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে তারা আমাদের দিকে আঙুল তুলবে।”
মেয়র আরো বলেন, চট্টগ্রামে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করব, যারা প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণে কাজ করবে। সেখানে কোনো রাজনৈতিক বিভাজন থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যারাই অবদান রেখেছেন, তাদের নাম সংরক্ষণ করা হবে। আমরা চাই এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে দুর্নীতি, বৈষম্য, নির্যাতন থাকবে না। মানুষের ভোটাধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত হবে। এই চেতনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব এবং প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সমুন্নত রাখব।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল বারিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুরের ছোট ভাই ডা. মোহাম্মদ রকিব উল্লাহ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তারসহ বিভাগীয় ও শাখা প্রধানবৃন্দসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ।