চট্টগ্রাম

মাফিয়া চক্রের কাছে কোন ইউনিভার্সিটি বন্ধক দেওয়া যাবে না: মেয়র ডা. শাহাদাত



আইনি প্রক্রিয়ায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা করা হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে কেউ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পুনর্দখল করতে না পারে সে বিষয়ে আইনি কাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।


মঙ্গলবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে ইউনিভার্সিটির মালিকানা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন মেয়র ডা. শাহাদাত।


মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টাকায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৩ সালেও চসিকের নিজস্ব ফান্ডের ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমি কেনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি পরবর্তীতে বেদখল হয়ে যায়।
“বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এই সংকটের দ্রুত সমাধান হবে এবং শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। চসিক একটি পেশাদার পরিচালনা পর্ষদ গঠনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিকে আবারো সুশৃঙ্খল এবং স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মেয়র বলেন, কোন পরিবারতন্ত্র বা কোন মাফিয়া চক্রের কাছে কোন ইউনিভার্সিটি বন্ধক দেওয়া যাবে না। ইনশআল্লাহ অত্যন্ত সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার জন্য চেষ্টা করছি। আমি আমাদের আইন কর্মকর্তাকে বলেছি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন রুলস করা হবে যাতে কোন মেয়র বা প্রভাবশালী পরবর্তীতে এটাকে নিজের সম্পত্তি হিসেবে যাতে করায়ত্ব করতে না পারে। এটা আমি আপনাদেরকে আজকে এখানে বসে কমিটমেন্ট করছি।
“আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা আমাদের নিয়ম অনুযায়ী যদি কাজগুলো করতে পারি তাহলে আজকে যে হাজার হাজার অভিভাবক ছাত্রছাত্রীরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে অত্যন্ত করুণভাবে যে এখন কি হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেটা আশা করি একটা সুন্দর সফলতা দেখবে এবং সফলভাবে এই ইউনিভার্সিটি সুনামের সাথে চলবে। তবে আমি আবারও বলছি যে মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই মাফিয়া চক্রের বাইরে গিয়ে আরেকটা মাফিয়া চক্র সেখানে যাতে ঢুকতে না পারে এ ব্যাপারে সাংবাদিকবৃন্দ, দেশবাসী, চট্টগ্রামবাসী আপনাদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।” পর্যায়ক্রমে চসিকের বেদখল হওয়া অন্যান্য সম্পত্তিও পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেন মেয়র।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ও অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি।

প্রাক্তন মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, মালিকানা প্রশ্নে সিভিল কোর্টে আবেদন করার সুযোগ থাকলেও তা কখনো করা হয়নি। এই কারণে, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মালিকানার বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের অধিকার কখনো চ্যালেঞ্জ হয়নি। তবে, একটি বিশেষ পক্ষ এটি দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল, যা আমরা দুর্বৃত্তায়ন হিসেবে বিবেচনা করি।


“৫ আগস্টের পর, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমরা সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ইউজিসির সহায়তা কামনা করেছি। চট্টগ্রামের মাননীয় মেয়র, যিনি নগর পিতা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং নগরবাসীর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমরা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারব। তবে, পরিস্থিতি যেহেতু জটিল হয়ে উঠেছে, অস্থিরতা দূর করতে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সিটি কর্পোরেশন এই মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ দূর করা এবং শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা।”


সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ)।
চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্প ও জনসাধারণের সুবিধার্থে মেয়রের উদ্যোগ
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। জাম্বুরি মাঠ নিয়ে মেয়র বলেন, “মাঠের অভাব শহরের বড় সমস্যা। জাম্বুরি মাঠটি যাতে সাধারণ মানুষ খেলার জন্য ব্যবহার করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হবে। আমরা মাঠটিকে সম্পূর্ণ খেলার উপযোগী করার পরিকল্পনা করছি এবং সেখানে কোনো কমিউনিটি হল থাকবে না। এটি একটি উন্মুক্ত খেলার মাঠ হবে।”
আশকার দিঘি নিয়ে মেয়র জানান, “দিঘিটি রক্ষা এবং স্থানীয় মানুষের জন্য হাঁটার জায়গা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশপাশের অবৈধ দখলকারীদের সরিয়ে আমরা সেখানে ওয়াকওয়ে তৈরি করবো। দিঘির পরিবেশ রক্ষা এবং তা জনকল্যাণে ব্যবহারের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাধীনতা পার্কের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে চাই। এখানে এবং বিপ্লব উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য ইতিহাস সংরক্ষণ করা হবে। এটা শুধুমাত্র একটি পার্ক নয়, এটি একটি শিক্ষামূলক স্থান হবে।”


আমবাগানে শহীদ ওয়াসিম আকরাম পার্ক নিয়ে মেয়র বলেন, “চট্টগ্রামের হিল এরিয়াগুলোর মধ্যে শহীদ ওয়াসিম আকরাম পার্ক অন্যতম। এখানে হিল এরিয়া সংরক্ষণের পাশাপাশি একটি সুন্দর পার্ক তৈরি করা হবে। এটি শুধুমাত্র একটি বিনোদন কেন্দ্র নয়, এটি পরিবেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জেব্রা ক্রসিং তৈরির কাজ শুরু করেছি। এটি সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আমরা অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জমি এবং দিঘি দখল করেছে, তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। উন্নয়নকাজের জন্য সব জায়গা পুনরুদ্ধার করা হবে।


সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেয়র বলেন, “আপনারা আমাদের পাশে থাকলে আমরা আরও দ্রুত এবং সফলভাবে কাজ এগিয়ে নিতে পারবো। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আপনারা এই উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করুন।” চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শহরের উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নগরবাসীর মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button