কৃষিকাজে আনন্দ থেকে উদ্যোক্তা, দুমকী উপজেলার মাইনুল ইসলাম
‘বাবাকে সাহায্য করতে মাঝেমধ্যেই মাঠে যেতে হতো। আনন্দও পেতাম। তবে জমিতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কষ্ট দিত। পরিবেশের ক্ষতি কমানোর পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের চিন্তা থেকেই জৈব সার তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া এক কেজি কেঁচো দিয়েই শুরু আমার জৈব সার তৈরি।’
কথাগুলো বলছিলেন দুমকী উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের মাইনুল ইসলাম। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। পড়াশোনার ফাঁকে বাবাকে মাঠে সাহায্য করেন। এভাবেই এক সময় ঝুঁকে পড়েন কৃষি কাজে। অনাবাদি পতিত জমিতে শাকসবজি ও ফসল আবাদ শুরু করেন।
২০২০ সালে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে থাইল্যান্ড থেকে ‘এসিনো ফটিডা’ বা ‘লাল কেঁচো’ আমদানি করা হয়। সেখান থেকে মাইনুল ১ কেজি সংগ্রহ করেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম খানের পরামর্শে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। বিভিন্ন সময়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশি-বিদেশি জৈব সার উৎপাদনকারী সংস্থার কাছ থেকেও খুঁটিনাটি জেনে নিতেন। মাইনুলের ভার্মি কম্পোস্ট ও কেঁচো উৎপাদন খামার থেকে প্রতি মাসে এক টনের বেশি জৈব সার ও এসিনো ফটিডা বা লাল কেঁচো বিক্রি হচ্ছে। এসব থেকে তাঁর ৪০ হাজার টাকা আয় হয়।
মাইনুল জানান, তাঁর এই সাফল্যের পেছনে বড় কোনো পুঁজি বা প্রযুক্তি নেই। সামান্য কেঁচোই তাঁকে সফল কৃষকে পরিণত করেছে। তাঁর সার ও কেঁচো নিজ এলাকা ছাড়াও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিন মাইনুলের খামারে গিয়ে দেখা গেছে, দোচালা টিনের সেমিপাকা ঘরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কয়েকটি পাকা চৌবাচ্চা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কেঁচো সারের মূল উপকরণ গরুর গোবর ও কচুরিপানা, কলাগাছসহ পচনশীল বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েক দিন পর এগুলো থেকেই তৈরি হবে ভার্মি কম্পোস্ট সার, জানান মাইনুল।
এ সময় কথা হয় কেঁচো সার কিনতে আসা কৃষক বাবুল হাওলাদার ও কালাম মৃধার সঙ্গে। তারা জানান, এক সময় আমরাও জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতাম। এ সার ব্যবহারের পর ফসলের রোগবালাই বেড়ে যেত, উৎপাদন খরচও হতো বেশি। মাইনুলের কাছ থেকে কেঁচো সার নিয়ে ব্যবহার করে এখন ভালো ফলন পেয়েছি, খরচও কম হচ্ছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য মাইনুলের খামার থেকে কেঁচো ক্রয় করতে এসেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছরই এখান থেকে জৈব সার ও কেঁচো কেনা হয়। আজ প্রতি হাজার ১২০০ টাকা দরে ১০ হাজার কেঁচো কিনেছি। কয়েক দিন পর আরও ৫ হাজার কেঁচো নেওয়া হবে।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম খান জানান, মাইনুলের সার-কেঁচো জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য কেনা হয়।
কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, মাইনুলের জৈব সার বরিশাল অঞ্চলের মধ্যে সেরা। আমরা তাঁর কাছ থেকেই কেঁচো সংগ্রহ করে বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করছি।