চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের অমূল্য সম্পদ। বারবার সতর্ক করার পরও যারা সৈকত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।
শুক্রবার সী-বিচ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর মেয়র জানান, পতেঙ্গা দেশের ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ; তাই সৈকতকে সুশৃঙ্খল ও সুন্দর রাখা দায়িত্ব সকলের দায়িত্ব।
মেয়র আরও বলেন, “পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সম্পদ — যেখানে মানুষ একটু সময় কাটাতে আসে। সেখানে কেউ বিচের ওয়াকওয়ে বা জনসাধারণের পথ দখল করে টেবিল-ছাতা রেখে ব্যবসা বসাতে পারবে না। ; পর্যটকদের জোর করে খাবার খাওয়ানো বা বিল চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও আমরা পেয়েছি। এখানকার ব্যবসা যদি সৈকতকে সংস্কৃতিগত বা ভৌগোলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, সৈকতের পেছনের অংশে দোকান-পাট আছে এবং সেখানে পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ রয়েছে; তাই সৈকত অঞ্চলে হোটেল বা স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে জনস্বার্থ বিপন্ন করা গ্রহণযোগ্য নয়। মেয়র বলেন, “আমি বারবার দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সম্মতিও জানিয়েছেন যে বীচ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এরপর আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এরপরও যারা সী-বিচ দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। জেলা প্রশাসন, সিডিএ, টুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”
অভিযানের আগে মেয়র জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) যৌথভাবে আয়োজিত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,
“পতেঙ্গা আমাদের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত উপকূলীয় এলাকাগুলোর একটি, কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ এর সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এমন একটি দায়িত্বশীল সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রতিটি দর্শনার্থী ও নাগরিক নিজেদের সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাগরকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব নেবে।”
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম. আসাদুজ্জামান পতেঙ্গার পরিবেশগত গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন,
“পতেঙ্গা শুধু একটি সৈকত নয়, এটি চট্টগ্রামের গর্বের প্রতীক। কিন্তু প্রতিদিন এখানে জমা হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক প্রাণী, জনস্বাস্থ্য এবং জীবিকার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে একসাথে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক প্রায় ৩,০০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর একটি বড় অংশ কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে, যা জীববৈচিত্র্য এবং উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকত পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করে, পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন ও সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করে এবং আগত দর্শনার্থীদের প্লাস্টিক ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। সচেতনতামূলক বার্তাগুলোতে তুলে ধরা হয় প্লাস্টিক বর্জ্যের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব এবং দায়িত্বশীল ভোক্তা আচরণের গুরুত্ব।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় সংগঠনের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে দেখিয়ে দেয় যে ছোট ছোট উদ্যোগ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এই কর্মসূচি ইউএনডিপি বাংলাদেশের “প্লাস্টিক সার্কুলারিটি প্রজেক্ট”-এর অংশ, যা দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টাঙ্গাইল জেলায় ১৫,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য পুনরুদ্ধার ও দায়িত্বশীলভাবে ব্যবস্থাপনা করা — যাতে প্লাস্টিক দূষণ থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদে রূপান্তরিত হয়।
.png)
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫
 
      চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের অমূল্য সম্পদ। বারবার সতর্ক করার পরও যারা সৈকত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।
শুক্রবার সী-বিচ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর মেয়র জানান, পতেঙ্গা দেশের ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ; তাই সৈকতকে সুশৃঙ্খল ও সুন্দর রাখা দায়িত্ব সকলের দায়িত্ব।
মেয়র আরও বলেন, “পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সম্পদ — যেখানে মানুষ একটু সময় কাটাতে আসে। সেখানে কেউ বিচের ওয়াকওয়ে বা জনসাধারণের পথ দখল করে টেবিল-ছাতা রেখে ব্যবসা বসাতে পারবে না। ; পর্যটকদের জোর করে খাবার খাওয়ানো বা বিল চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও আমরা পেয়েছি। এখানকার ব্যবসা যদি সৈকতকে সংস্কৃতিগত বা ভৌগোলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, সৈকতের পেছনের অংশে দোকান-পাট আছে এবং সেখানে পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ রয়েছে; তাই সৈকত অঞ্চলে হোটেল বা স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে জনস্বার্থ বিপন্ন করা গ্রহণযোগ্য নয়। মেয়র বলেন, “আমি বারবার দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সম্মতিও জানিয়েছেন যে বীচ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এরপর আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এরপরও যারা সী-বিচ দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। জেলা প্রশাসন, সিডিএ, টুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”
অভিযানের আগে মেয়র জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) যৌথভাবে আয়োজিত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,
“পতেঙ্গা আমাদের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত উপকূলীয় এলাকাগুলোর একটি, কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ এর সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এমন একটি দায়িত্বশীল সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রতিটি দর্শনার্থী ও নাগরিক নিজেদের সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাগরকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব নেবে।”
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম. আসাদুজ্জামান পতেঙ্গার পরিবেশগত গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন,
“পতেঙ্গা শুধু একটি সৈকত নয়, এটি চট্টগ্রামের গর্বের প্রতীক। কিন্তু প্রতিদিন এখানে জমা হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক প্রাণী, জনস্বাস্থ্য এবং জীবিকার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে একসাথে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক প্রায় ৩,০০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর একটি বড় অংশ কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে, যা জীববৈচিত্র্য এবং উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকত পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করে, পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন ও সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করে এবং আগত দর্শনার্থীদের প্লাস্টিক ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। সচেতনতামূলক বার্তাগুলোতে তুলে ধরা হয় প্লাস্টিক বর্জ্যের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব এবং দায়িত্বশীল ভোক্তা আচরণের গুরুত্ব।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় সংগঠনের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে দেখিয়ে দেয় যে ছোট ছোট উদ্যোগ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এই কর্মসূচি ইউএনডিপি বাংলাদেশের “প্লাস্টিক সার্কুলারিটি প্রজেক্ট”-এর অংশ, যা দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টাঙ্গাইল জেলায় ১৫,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য পুনরুদ্ধার ও দায়িত্বশীলভাবে ব্যবস্থাপনা করা — যাতে প্লাস্টিক দূষণ থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদে রূপান্তরিত হয়।
.png)
আপনার মতামত লিখুন