ভালুকা: ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের কৃষিজমি ও জলাশয় দীর্ঘদিন ধরে শিল্পবর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়ায় কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বুধবার (১৫ অক্টোবর ২০২৫) উপজেলা প্রশাসনে পেশ করা এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে।ভরাডোবা ইউনিয়নের কৃষিজমি, খাল-বিল ও আশপাশের পরিবেশে শিল্পকারখানার বর্জ্যের প্রভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান—এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিল, হ্যারি ফ্যাশন লিমিটেড এবং মুলতাজিম স্পিনিং মিল—দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক ও গোবরজাত বর্জ্য সরাসরি কৃষিজমিতে ফেলছে। এর ফলে মাটির উর্বরতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে গেছে, ফলন কমেছে এবং পানির মানও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।বুধবার (১৫ অক্টোবর ২০২৫) ভালুকা উপজেলা হলরুমে আয়োজিত এক সভায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির সদস্য ও কৃষক প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার মো. রুহুল আমিন। তিনি জানান, মাঠ জরিপ ও কৃষকদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একরপ্রতি বাৎসরিক ক্ষতি গড়ে ৬৬,০৮৫ টাকা ধরা হয়েছে। ইউনিয়নের সব কৃষিজমি হিসাব করলে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৮ টাকা। গত ১৫-১৬ বছরের দূষণকালীন সময়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার ৬৬৯ টাকা।রুহুল আমিন বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে অভিযোগ করছি, মানববন্ধন করছি, কিন্তু স্থায়ী প্রতিকার পাইনি। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক প্রকাশ্যে কথা বলতেও ভয় পান।”তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই দূষণ শুধু কৃষিজমিতেই সীমাবদ্ধ নয়, গবাদিপশুর খাদ্য, স্থানীয় জলাশয়, এমনকি মানুষের স্বাস্থ্যও এর মারাত্মক প্রভাবে পড়ছে। টানা ক্ষতির কারণে অনেকে জমি পতিত রেখে কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছেন।ক্ষতিপূরণ ও দূষণ বন্ধের দাবিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে:১. তদন্ত প্রতিবেদনে নির্ধারিত ক্ষতির ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।২. পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মিলগুলোর দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।৩. এ ধরনের ক্ষতি প্রতিরোধে নিয়মিত মনিটরিং টিম গঠন ও তদারকি জোরদার করা।৪. দূষণকারী শিল্পমালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োজনবোধে তাদের লাইসেন্স স্থগিতাদেশ দেওয়া।৫. প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আদালতে রুল জারি বা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া।ক্ষতিপূরণের দায় বণ্টনে কৃষকদের প্রস্তাবক্ষতিপূরণের বিষয়ে ইউএনও এবং উপজেলা ভূমি অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করে কৃষকরা তাদের মতামত পেশ করেছেন। কৃষকদের প্রস্তাবিত অনুপাক্ষিক মতামত অনুযায়ী, মোট ক্ষতিপূরণের ৭৫ শতাংশ বহন করবে এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিল ও হ্যারি ফ্যাশন লিমিটেড। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ বহন করার জন্য মুলতাজিম স্পিনিং মিলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন আশা প্রকাশ করেন, “এই তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রশাসন যদি গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ নেয়, তবে ভরাডোবা ইউনিয়নের কৃষকরা অন্তত কিছুটা স্বস্তি ফিরে পাবেন।”