ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ সংঘর্ষ: উত্তপ্ত পরিস্থিতি, পুলিশের লাঠিচার্জ এবং ভাইরাল থাপ্পড়ের ভিডিওর নেপথ্য কাহিনী

ঢাকা কলেজ এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক দফা সংঘর্ষের পর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তা সিটি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মারছেন।..
ঘটনার দিন আমি, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার হিসেবে, অফিস থেকে একটি বিশেষ এসাইনমেন্ট পাই। ধারণা ছিল, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। প্রতিদিনের মতো আমি ধানমন্ডির ভেতর দিয়ে স্টার হোটেলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি সিটি কলেজের সামনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছে। আমি আমার বাইকটি পার্ক করে তড়িঘড়ি করে মোবাইল হাতে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, পূর্বে কে বা কারা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। তারই জের ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রতিশোধ নিতে সিটি কলেজের সামনের নামফলক ভাঙচুর করে এবং কিছু শিক্ষার্থীকে মারধরও করে। পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। পরে সেখানে পুলিশের একাধিক প্লাটুন মোতায়েন করা হয়। ধানমন্ডি সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। জনসাধারণ চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
এদিকে, ক্লাস শেষে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। তারা শান্তভাবে সবাইকে ভিতরে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বারবার শিক্ষার্থীদের গর্জনে পরিস্থিতি ক্রমেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয়।
পরে আবারো উত্তেজনা চরমে ওঠে, যখন সিটি কলেজের সামনে দিয়ে একটি ভিআইপি বাস অতিক্রম করছিল। শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হয়, বাসে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা রয়েছে। এরপর “ধর ধর” ধ্বনিতে বাসটিতে হামলা চালানো হয়, গ্লাস ভেঙে ফেলা হয় এবং বাসের ভিতরে থাকা কিছু যাত্রীকে মারধর করা হয়। এক মেয়ে এবং এক ছেলে আর্তনাদ করে বলেন, “আমাকে বাঁচান!” দ্রুত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ সদস্য একযোগে লাঠিচার্জ শুরু করেন। এক শিক্ষার্থী পুলিশের সাথে তর্কে জড়ালে, উত্তেজিত এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে তিন-চারটি থাপ্পড় দেন—সেই ঘটনাটিই মোবাইলবন্দি হয়ে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এই সংঘর্ষ চলে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ঢাকা সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেন—কলেজ দুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। সাথে সাথে ক্যাম্পাস খালি করার নির্দেশ মাইকে প্রচার করা হয়। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থামালেও তারা কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
এই সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। ঢাকার কলেজগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ এবং আইডিয়াল কলেজের মধ্যে সময় সময় এমন উত্তেজনা দেখা যায়। স্থানীয়রা বলেন, “আল্লাহ ছাড়া আসলে আর কেউ জানে না কখন কীভাবে শুরু হয় এসব!”
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সংঘর্ষের পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে। ফেসবুক বা মেসেঞ্জার ভিত্তিক কিছু ছাত্র গ্রুপের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, আধিপত্য বিস্তার এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে এসব সংঘর্ষের জন্ম হয়। ঢাকা সিটি কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করেও বারবার উত্তেজনার সূত্রপাত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা এককভাবে চলাচল করলে সিটি কলেজের কিছু উগ্রপন্থী শিক্ষার্থী ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বা হামলা চালায়। এমনকি বাস চলাচলের সময়ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে হামলার ঘটনা ঘটে।
এই ধরনের সংঘর্ষ শুধু ছাত্রদের জন্য নয়, গোটা শহরের জন্য এক বড় ভোগান্তি। যানজট, আতঙ্ক, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া—সবকিছুরই দায় বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।