আন্তর্জাতিক

মুসলিম নির্যাতন বন্ধ না করলে হুমকিতে পড়তে পারে বৃহত্তর ভারতের অস্তিত্ব

বিশ্লেষকরা সাবধান করে দিয়েছেন যে, ভারতের একক হিন্দু রাষ্ট্র কায়েমের চেষ্টায় মুসলমানরা নয়, বরং দেশটির হিন্দুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভারতে মুসলমানদের নিপীড়ন ও উৎখাতকে প্রকৃতি এবং নীতিগত সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান বলে মনে করছেন তারা। এই সংঘাত ভারতের ভৌগোলিক অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে এবং এতে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তর সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন যে, ভারতে মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

ভারতে মুসলিম নিপীড়নের বিষয়টি প্রায়ই আলোচিত হয়ে আসছে। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় ইস্যু নয়, বরং আর্থিক, সামাজিক, এমনকি সরকারি সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও মুসলমানদের বঞ্চিত করার অভিযোগ পুরনো। সম্প্রতি, এক মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের হওয়া অবস্থায় পুলিশ কর্তৃক বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়েছে। কোথাও আবার মসজিদের সামনে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিচ্ছে উগ্রপন্থীরা।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষত আসাম, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ডসহ অন্য অনেক অঞ্চলে আরএসএস (রাশনাল সোসাইটি অফ হিন্দু) ও বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) একক হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলিম নির্যাতন চালাচ্ছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, শুধু মুসলিমদের উপরই নয়, অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপরও হামলা হচ্ছে। তাদের মতে, এর পেছনে মূল কারণ হলো ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি মুসলিম নির্যাতন বন্ধ না করা হয়, তবে বৃহত্তর ভারতের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ভূরাজনীতি বিশ্লেষক ও গবেষক এম জাকির হোসেন খান বলেছেন, “ভারতের ৩০ কোটি মুসলমান কিংবা সংখ্যালঘু অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী, যেমন খ্রিস্টান সম্প্রদায় বা বৌদ্ধদের যদি রুট আউট করে একক হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করতে চান, বা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানাতে চান, তা কখনোই সম্ভব হবে না। এটি শুধুমাত্র ভারতের ভৌগোলিক অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তর সংঘাত তৈরি করবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত গঠনের পাশাপাশি ওআইসি এবং জাতিসংঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বলেন, “মুসলিম যারা মোড়ল, তাদের যদি এই চাপ দেওয়া যায় যে, আপনারা শক্ত অবস্থান গ্রহণ করুন, তবে তারা বাধ্য হবে। কারণ, যদি অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, মেরুদন্ড দুর্বল হয়ে যায়, তবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।”

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের রিলিজিয়াস ফ্রিডম কমিটি ভারতকে জাতিগত নিপীড়ন বন্ধে সতর্ক করলেও, মোদি সরকার এতে কর্ণপাত করেনি। ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মুসলিম নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি ভারতীয় সরকার এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিপদ বাড়তে পারে।

ধ্রুবকন্ঠ/এসপি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button