ক্যাম্পাস বার্তা

মাভাবিপ্রবিতে সনদ পেতে তীব্র ভোগান্তির শিকার শিক্ষার্থীরা

মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) তে একটি সনদ উত্তোলনের আবেদন করতেই অন্তত সাতটি দপ্তরে ঘুরতে হয় শিক্ষার্থীদের। এর ফলে সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলন করতে এসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, নম্বরপত্র ও সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। বিড়ম্বনা এড়াতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন সম্পূর্ণ সনদ উত্তোলন প্রক্রিয়াকে অনলাইন করার দাবি জানিয়ে আসছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সনদ উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে দীর্ঘ লাইন দিয়ে অনেক সময় অপচয় করতে হয় শিক্ষার্থীদের। টাকা পরিশোধের পরে সনদ উত্তোলন ফরম পূরণ করে শিক্ষার্থীদের যেতে হয় নিজ বিভাগে। সেখানে পূরনকৃত আবেদন ফর্ম ও টাকা জমার রশিদ দেখিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিতে জমা দিতে হয় বিভাগের অফিস কক্ষে। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর শেষ হলে যেতে হয় হলের প্রভোস্টের কাছে। সেখানেও অফিসে জমা দিতে হয় আবেদন ও টাকা জমার রশিদ, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রভোস্টের থেকে স্বাক্ষর ও সীল দিয়ে আনেন। পরবর্তীতে যেতে হয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিকের স্বাক্ষরের জন্য। এরপর যেতে হয় শারীরিক শিক্ষা বিভাগের দপ্তরে।এভাবে একে একে যেতে হয় রেজিস্ট্রার অফিসের একাডেমিক শাখায়, বিএনসিসি প্লাটুন কমান্ডার ও হিসাব অফিসের ছাত্র বেতন শাখায়।

এসব কার্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না পেয়ে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ অপেক্ষা কখনও দিন পেরিয়ে সপ্তাহও অতিক্রম করে। ফলে সনদ তুলতে এসে অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে আবেদন জমা দিলেও কোন সুফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি।

ভোগান্তির বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী আদিব রহমান রাহাত বলেন, সনদ উত্তোলন করতে গিয়ে একের পর এক দপ্তরে ঘুরতে হয় শিক্ষার্থীদের। প্রায় সময় আবার স্বাক্ষরের জন্য কর্তাব্যক্তিদের কার্যালয়ে পাওয়া যায় না। এতে ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অথচ পুরো প্রক্রিয়াকে অনলাইনে নিয়ে আসলে খুব সহজেই কাজ হয়ে যায়। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এতো সময় অপচয় করতে হয় আমাদের।

গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, এই যুগে এসেও বিশ্ববিদ্যালয় এখনও সনাতনি পদ্ধতি থেকে বের হতে পারেনি। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ সকল কার্যক্রম অনলাইনে করলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হতেন না। একটি স্বাক্ষর পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করাও লাগতো না।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আল মামুন সরদার বলেন, আমি তো জানিনা। ঐটা আমাদের কেউ জানেনা। এখন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্যার সরাসরি কমিটির ফাইলটা ছেড়ে দিয়ে ভিসি স্যারের অনুমতি নিয়েছে কিনা। এটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্যারই বলতে পারবেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও প্রযুক্তিগত সুবিধা না পেয়ে কেন এই ভোগান্তি জানতে চাইলে মাভাবিপ্রবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা রেজাল্ট প্রক্রিয়া অটোমেশন করেছি। ২০২১-২০২২ সেশন থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যাংকে লাইন ধরে টাকা জমা দেয় না। এইটা করা সম্ভব হয়েছে। আর সনদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের একটা দাবি আছে। এই বিষয়টা একাডেমিক কাউন্সিলে প্লেস করা হয়েছিল। এটি করতে গেলে আরও বেশ কিছু অফিস আছে, এরা কিন্তু অটোমেশনের আওতায় আসেনি। এজন্য ডিজিটাল সুবিধা এখানে দেওয়া যাবে কি না, তার জন্য ঐ কমিটি এটি সুপারিশ করবে। গত একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে কমিটি হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button