সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছের এক আশ্চর্য ভান্ডারের নাম হলো চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট

বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছের এক আশ্চর্য ভান্ডারের নাম হলো চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট। বন্দরনগরীর প্রায় ২০০ বছর পুরনো এই মাছের বাজার শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নয় বরং গোটা দেশের মৎস্য ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। বিশাল আকৃতির কোরাল মাছ, সোনার চেয়ে দামি টুনা মাছ থেকে শুরু করে আঙ্গুলের সাইজের পুঁটিমাছসহ সকল প্রজাতির মাছ এখানে পাওয়া যায়। ভোরের আলো ফোঁটার আগেই ক্রেতা, বিক্রেতা ও পাইকারদের হাঁকডাকে রীতিমতো কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয় দেশের বৃহত্তম এই মাছের বাজার।
প্রতিদিন ভোররাত ৩ টা থেকেই মাঠভর্তি বোটগুলো ভিড়তে শুরু করে ফিশারি ঘাটে। এই বোটগুলোতে সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের মিঠাপানির মাছ থাকে। এমনকি ভারত ও মিয়ানমার থেকেও এখানে মাছ আসে। ঘাটে মালবোঝাই বোট ভিড়লেই শুরু হয়ে যায় হাঁকডাক ও হৈ-হুল্লোড়। একের পর এক মাছের টুকরি, প্লাস্টিকের বড় চৌবাচ্চা নামতে শুরু করে ঠেলাগাড়ি করে। এরপর একদিকে যেমন চলে মাছ বেচাবিক্রি অন্যদিকে চলে বরফ দিয়ে মাছ সংরক্ষণের প্রস্তুতি।
ফিশারি ঘাটের মাছের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বাজারটির আশেপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বরফকল ও হিমাগার। এই হিমাগার ও বরফকলগুলো না থাকলে ফিশারি ঘাটের মাছের ব্যবসায় চরম ভাটা পড়ত।
প্রতিদিন ভোররাত ৩ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত হুলুস্থুল কর্মচাঞ্চল্যতা চোখে পড়ে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক এই মাছের বাজারে। পাইকাররা মণে মণে মাছ কিনে নিয়ে যান এখান থেকে। সেইসাথে খুচরা ব্যবসায়ীদেরও দেখা যায় ভীড়ের মধ্যে। এমনকি বিদেশেও মাছ রপ্তানি হয় এই বাজার থেকে।
ফিশারি ঘাটে লাক্ষা, ইলিশ, কোরাল, ভেটকি, সুরমা, রেড স্নাপার, মাইট্টা, রুপচাঁদা, টুনা, ছুরি, ফাইস্যা, লইট্টা, সারডিন, স্কুইড, চেউয়া, চিংড়ি, কাটল ফিশ সহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়।
পাশাপাশি রুই, কাতলা, বোয়াল, তেলাপিয়া, মাগুর, শিং, কই, কাচকি, বাইলা, মইল্লা, বাইম, পুঁটিসহ হরেক প্রজাতির দেশীয় মিঠাপানির মাছ বিক্রি হয় দেশের সর্ববৃহৎ এই মাছের বাজারে। মৌসুমভেদে দৈনিক অন্তত ২০ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয় চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাটে।