তথ্যপ্রযুক্তি

মেহদী হাসান ও ‘অভ্র’

বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার ছিল বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়তে থাকে।
ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় বায়োসের স্টলে গিয়ে বাংলা লেখার সফটওয়্যার এর প্রযোজনীয়তা উপলব্দি করলেন। দীর্ঘ চেষ্টায় তিনি ভিজ্যুয়াল বেসিক প্রোগ্রাম দিয়ে বানিয়ে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার অভ্র। ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। এরপর অভ্রের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান।
তারপর মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে। এতে কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র ব্যাপক জনপ্রিয় হতে থাকে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ রিদমিক। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবছর ২০২৫ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button